বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের করোনা মুক্ত রাখতে ব্যবসায়ী সমিতির স্বেচ্ছাশ্রম

বগুড়া নিউজলাইভ ডটকম, শেরপুর প্রতিনিধিঃ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রলয় সৃষ্টি করেছে। অদৃশ্য একটি ক্ষুদ্রাকৃতি জীবাণুর আক্রমণ মোকাবেলায় সারাবিশ্বে মানুষ আজ নিজ নিজ ঘরে স্বেচ্ছায় বন্দি। প্রতিটি দেশের সব দল, পেশা, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ মারাত্মক ছোঁয়াচে ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে সমূহ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। থেমে নেই বগুড়ার শেরপুর। শহরের স্থানীয় রেজিষ্ট্রি অফিস বাজার এলাকায় রেজিষ্ট্রি অফিস বাজার সমিতির সদস্যরা করোনা থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতাকে মুক্ত রাখতে নিয়েছে এক ব্যতিক্রমী উদ্দ্যোগ। এই উদ্দ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ।


সফিক, রব্বানীসহ একাধিক ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, করোনা সম্পর্কে সরকারের নির্দেশনা না মেনেই অবাধে চলতো বেচাকেনা। সমিতির সদস্যরা গত ৫ দিন আগে বাজারে দুই প্রবেশ পথ বাঁশ দিয়ে লকডাউন করে। যাতে সহজে বা বিনা প্রয়োজনে পাড়া মহল্লা থেকে কেউ বাহিরে বের হতে না পারে এবং বহিরাগত কেউ প্রবেশ করতে না পারে। এমনকি বাজারে এসে আতংকিত না হয়ে নির্বিঘেœ কেনা- বেচা করতে পারে। পায়ে হাটার জন্য ফাকা রাখা হয়েছে। যাতে প্রয়োজনে পায়ে হেটে তার কাজ করতে পারে। একাজে রাহিদুল হাসান শেখ, সোহান হোসেন রাসেল, মাহমুদুল হাসাান রোমান, রেদোয়ানুল ইসলাম স্বাধীন, মাহবুবুর রহমান বাবু, কাজল ইসলাম বাবু, বিজয় খন্দকার, সামসুল পোদ্দার হৃদয়,নিখিল,আলী আকবর সহ এলাকার যুবকরা সাহায্য করছে। তারা জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও ঘনবসতিপূর্ণ পাড়া মহল্লায় মাইকিং করে ঘুরে ঘুরে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করেন। দলটি এ সময় জীবাণুনাশক ওষুধও স্প্রে করে।
সমিতির সভাপতি মর্তুজা কাওছার অভি জানান, এখানে প্রতিদিন শতশত মানুষের আনাগোনা। বাজারে যারা আসে তারা যেন করোনা সংক্রামনের শিকার না হয়। তাই সকলের কথা ভেবে সমিতির পক্ষ থেকে একটি উদ্দ্যোগ নেই। অযথা আড্ডা, বহিরাগত যান চলাচল করতে না পারে এবং সাধারন মানুষ যেন এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকে সেজন্য বাঁশ দিয়ে বাজারে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেই। যেহেতু বাজারে লোক সমাগম বেশি এবং এখানে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্য পাওয়া যায় তাই, স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সমিতির ১৫জন সদস্যরা দিনে ৪ বার (বাজার চলাকালীন সময়ে) জীবানুনাশক স্প্রে দিয়ে বাজার পরিস্কার, দোকানে আসা ক্রেতারা সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে, শরীর স্প্রে করে, হাতে পলিথিন দিয়ে বাজারে প্রবেশ করাই। একই ভাবে বিক্রেতারাও আসবে কিন্তু তারা সকল পণ্য হাতে পলিথিন পেঁচিয়ে বিক্রি করছে। যা দেখে এলাকার অনেকে তাদের সাধুবাদ জানিয়েছে। এছাড়াও এলাকায় অন্য জেলা থেকে কেউ আসছে কী না সে সম্পর্কেও খোঁজ রাখা হচ্ছে।


মুকুল হোসেন নামের এক যুবক বলেন, এই বাজারের মধ্য দিয়ে দিয়ে প্রচুর যানবাহন যাতায়াত করতো। যেখানে প্রতিদিন ১০ হাজার লোকের সমাগম হয়। করোনা ভাইরাস নিয়ে সরকার নির্দেশনা দিলেও সামাজিক দূরত্ব না মেনে হাট-বাজারে কেনাকাটাসহ আড্ডায় ব্যস্ত থাকছেন অনেকে। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা রয়েছে। হাটবাজার কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে কেনা কাটা করতো তারা। অত্যন্ত দুঃখজনক যে, আমরা নিজেরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে নানারূপ আড্ডা, সামাজিক ও অন্যান্য কর্মকান্ডের মাধ্যমে একে অপরের কাছে ভাইরাস পৌঁছে দিতে সাহায্য করছি। কথার ফুলঝুরি দিয়ে ভাইরাস মারার চেষ্টা করছি। বাজারে মাছ কিনতে আসা জহুরুল জানান, জনগণের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, কয়েকটি দিন কষ্ট করুন। নিজে বাঁচুন এবং অপরকে বাঁচতে সহায়তা করুন। একটু কষ্ট করলে এ সমস্যার আশুই সমাধান সম্ভব হবে। অন্যথায় কিছু মানুষের অসহায় মৃত্যু অনিবার্য।
এলাকার ব্যবসায়ী ও সুধীজনের মতে, করোনা মহামারি ঠেকাতে তারা যে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে এসেছে তা লক্ষনীয়। সকলের সচেতনতা আর সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলেই ঠেকানো সম্ভব এই মহামারি।

error

Share this news to your community