পেঁয়াজের বিকল্প ‘চিভ’

মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ড. রুম্মান আরা জানান, তিনি নিজে চিভ তরকারিতে ব্যবহার করেছেন

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ফসল চিভ-১ পোঁয়াজ-রসুনের বিকল্প হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৭ সালের দিকে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় বারি চিভ-১ নামের একটি উচ্চ ফলনশীল জাত অবমুক্ত করা হয়।

চীনে মশলার তালিকায় এ ফসলটি জনপ্রিয়তার তালিকায় রয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এ ফসলটির ব্যবহার রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বারির আঞ্চলিক মশলা গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নূর আলম চৌধুরী। দীর্ঘদিন চিভ নিয়ে গবেষণা শেষে উত্তর চীন, সাইবেরিয়া ও মঙ্গোলিয়া অঞ্চলের মসলাজাতীয় বহুবর্ষজীবী এই ফসলে সাফল্য পান তিনি। তার সহযোগী হিসেবে গবেষণার কাজে অংশগ্রহণ করেন ড. মোস্তাক আহমেদ, ড. আলাউদ্দিন খান ও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তারা চিভের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন মসলাটির ওপর গবেষণা চালান।

বিজ্ঞানীদের গবেষণার সাফল্যে হিসেবে বছর জুড়েই চাষ ও ফলনের উপযোগী বারি চিভ-১ নামের একটি জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন তারা।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নূর আলম চৌধুরী জানান, মসলা খাদ্য পেঁয়াজ ও রসুনের স্বাদ বা গুণাগুণ থাকায় আপৎকালীন পেঁয়াজ বা রসুনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে এই চিভ। চিভ সাধারণত স্যুপ, সালাদ ও চাইনিজ ডিশে ব্যবহৃত হয় পৃথিবীর অনেক দেশে।

তিনি আরও বলেন, “চিভের পাতার কিনারা মসৃণ ও লিলিয়ান আকৃতির ফ্ল্যাট। এর স্বাদ অনেকটা দেশীয় মশলা পেঁয়াজ-রসুনের মতো। চিভ রোগ নিয়ন্ত্রণ করে, হজমে সাহায্য করে। এছাড়া এরমধ্যে ক্যানসার প্রতিরোধী গুণাগুণ রয়েছে। চিভে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, নায়াসিন, ক্যারোটিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে।”

“দেশের পাহাড়ি এলাকা সিলেট ও চট্টগ্রামেই সাধারণত চিভ চাষ হয়ে থাকে। দেশের যেসব এলাকায় পেঁয়াজের চাষ হয়, বিশেষ করে ফরিদপুর, পাবনা, রাজবাড়ী, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা, বগুড়া ও লালমনিরহাট এলাকায় চিভ চাষের উজ্জল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। চিভ গাছ একবার লাগালে দীর্ঘদিন ধরে ফল পাওয়া যায়। টবে বা বাড়ির আঙিনায় এই ফসলের চাষ করা যায়।”

বৈজ্ঞানিক এই কর্মকর্তা আরও জানান, “বিবিএস ২০১৭ এর তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে বর্তমানে বাৎসরিক পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৭ দশমিক ৩৫ লাখ মেট্রিক টন। যদিও দেশে চাহিদা রয়েছে ২২ লাখ মেট্রিক টন। বাকি পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে এই চিভকে ব্যবহার করা গেলে আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে। এছাড়াও এই চিভ জাতীয় ফসলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এসব সারা বছর ধরেই চাষ করা যায়। চিভ-১ জাতের গাছের উচ্চতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতার দৈর্ঘ্য হয় ২৩-৩০ সেন্টিমিটার। ভাল্ভ লম্বা আকৃতির এর দৈর্ঘ্য হয় এক থেকে দেড় সেন্টিমিটার পর্যন্ত। প্রতি হেক্টরে পাতাও গাছসহ উৎপাদন হয় ১০-১২ টন।

“চারা লাগানোর সময় থেকে ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু হয়। বছরে চার-পাঁচবার ফসল সংগ্রহ করা যায়। দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় বিগত ২০১৭ সালে বারি-১ নামের উচ্চফলনশীল চিভ ইতোমধ্যেই চাষ সম্প্রসারণে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মশলা ফসল বিশেষজ্ঞ আঞ্চলিক মশলা গবেষণা কেন্দ্র (বিএআরআই) গাজীপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার জানান, “পেঁয়াজ-রসুনের বিকল্প হিসেবে আদর্শ একটি মশলাজাতীয় ফসল চিভ। এর গুণাগুণও পেঁয়াজ-রসুনের চেয়ে বেশি। দেশে ব্যাপকভাবে চিভ চাষ করা গেলে পেঁয়াজ-রসুনের ঘাটতি এই চিভ দিয়ে মেটানো সম্ভব হবে।

error

Share this news to your community