নিরাপদ নৌপথের দাবীতে নোঙর’র শোক সভা ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

প্রেস রিলিজঃ সোমবার সকাল ১১:০১ মনিটে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুনে পুড়ে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে শোকসভা ও নিরাপদ নৌপথের দাবীতে মানববন্ধন করেছে নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর বাংলাদেশ’।

অনুষ্ঠানের সভাপতি সুমন শামস বলেন, নৌপথ কে অচল করার ষড়যন্ত্র চলছে। নদীমাতৃক দেশে ৫০ বছরেও নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি কেন? এ সময়ের মধ্যে আড়াই হাজারের বেশি নৌ-দুর্ঘটনায় প্রায় ২১ হাজার যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা আর কোন নৌ দুর্ঘটনা দেখতে চাই না। তাই্ বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করে এ সকল অনিয়ম রোধ করতে হবে। সঠিক মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে তা না হলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বাড়বে। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। নৌপরিবহন ও নৌ যাত্রীর নিরাপত্তার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি নৌযান কে যান্ত্রিক ত্রুটির তথা ইঞ্জিন ও ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের লাইন চেকিং ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে গন্তব্য যাত্রা নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক নৌযানের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বিআইডাব্লিউ টি এ নির্ধারিত ইউনিফর্ম পোশাক পরিধান করতে হবে। প্রত্যেক নৌযানে ডিজিটাল ডিভাইস স্থাপন করতে হবে। যাত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের সকল তথ্য সংগ্রহ নিশ্চিত করে (NID) ই-টিকেট আওতায় এনে যাত্রীদের প্রদান করতে হবে। প্রত্যেক নৌযানে First Fire Fighter Action Team গঠনে করে নৌযাত্রীর স্বাস্থ্য সেবা First Aid টিম চলমান রাখতে হবে।

বুড়ি গঙা নদী বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক মিহির বিশ্বাস বলেন, নদী আমাদের মায়ের মতো, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। এই দেশ বাঁচাতে হলে নদী পথকে রাখতে হবে নিরাপদ। আমরা ভেবে ছিলাম যে নৌ-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আর রাজপথে দাঁড়াদে হবে না! কিন্ত আবারো আমরা রাজপথে দাড়িয়েছি এটা কষ্ট দায়ক। আর কতো সময় লাগবে আমাদের নৌপথ নিরাপদ করতে?

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক বিপ্লব মোস্তাফিজ বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দেশে ফিরে আসলে এ ঘটনার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেবন আমরা জানি। কিন্তু বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপথের নিরাপত্তার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, অনেক সরকারী কর্মকর্তারা রয়েছেন যাদের দেখার কথা যে কোন নৌযানটি কখন কোথায় যাচ্ছে, সে নৌয়ান ঠিক আছে কি না, দাহ্য পদার্থ আছে কিনা, বিস্ফোরক আছে কিনা। আমরা দেখেছি যে এ পর্যন্ত দেশে যে নৌ-দূর্ঘটনা ঘটেছে তার বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে তার একটি মামলার আসমিদের শাস্তি হয়নি! কারণ কি? তারা কি ধরাছোঁয়ার বাইরে? এ কাজে নিয়োজিত আছেন তারা কি করছেন? লঞ্চ মালিকদের অবহেলা সহ্য করা হবেনা।

সাংস্কৃতিক সংগঠক আবির বাঙালী বলেন, আমরা দেখেছি যে প্রত্যেকটি ক্যাবিনে আগুন লেগে মানুষ পুড়ে মরে ছাই হয়ে গেছে। এ ভাবে মানবতার লাঞ্ছনা আমরা সহ্য করবো না। তাই আমাদের যৌক্তিক দাবি হচ্ছে দেশের সকল নৌযান কে পরিবেশ বান্ধব করতে হবে। একই সাথে প্রত্যেক যাত্রীর জীবন বীমা করতে হবে। এবং এই দূর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, যারা আহত হয়েছেন তাদে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

মানববন্ধনে বক্তারা বিভিন্ন সুপারিশ উপস্থাপন করে বলেন, অনুমতি ছাড়াই লঞ্চের ইঞ্জিন পরিবর্তন করা না করা, আগুন লাগার পরে বের হবার সকল দরজা বন্ধ না রাখা, লঞ্চের বয়া যাত্রীদের হাতের নাগালে রাখা, লঞ্চ মালিক পক্ষ টিকিট কাউন্টার ব্যবহার করাতে বাধ্য করা, নৌযানে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা, বিআইডব্লিউটিএ’র কঠিন নজরদারির বাড়ানো, নৌপথের লঞ্চের বিপদজনক প্রতিযোগিত বন্ধ করা, ২৩ মে, জাতীয় নিরাপত্তা দিবস ঘোষণা করা, নৌপথে সঠিক মনিটরিং করা, গত ৫০ বছরে আড়াই হাজারেরও বেশি দুর্ঘটনায় প্রায় ২১ হাজার নৌযাত্রীর পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থান তৈরী করাসহ নৌপথকে নিরাপদ করার জন্য বক্তারা বিভিন্ন ধরনের সুপারিশ তুলে ধরেন।

মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন, আমিনুর রসুল, রাশেদ হাওলাদার, উত্তম ঘোষ, রুকাইয়া নাসরিন, অভিলাষ দাস এবং কনক রাঁওশান।

এ ছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ শাজাহান, মীর মোকাদ্দেস আলী, এফ এইচ সবুজ, মঞ্জুর রহমান, হৃদয় চৌধুরী, বাপ্পি খান, আহসান হাবিব, মোঃ মাজেদুল হক মাজেদ, আব্দুর রউফ, দুলাল, জি এম নবী, আমিনুল হক চৌধুরী, বাহারুল ইসলাম টিটু, মোহাম্মদ শেখ সালামত, শর্মী আক্তার প্রমুখ।

গত বৃহস্পতিবার ২৩ ডিসেম্বর, দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঝালকাঠি শহরের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় হঠাৎ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়লে শীতের রাতে লঞ্চের ৪২ জন ঘুমন্ত যাত্রী নিহত হন এবং প্রায় ৭০ জন যাত্রী দগ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে এবং হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

error

Share this news to your community