অব্যাহত নারী নির্যাতন রুখে দাঁড়ান নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইকে বেগবান করুন

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া নিউজলাইভ ডটকমঃ বেগম রোকেয়ার ১৪১ তম জন্ম এবং ৮৯ তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম বগুড়া জেলার উদ্যোগে আজ ১০ ডিসেম্বর ২০২১ বিকাল ৪টায় শহরে র‌্যালী শেষে সংগঠন কার্যালয়ে সংগঠনের জেলা সভাপতি দিলরুবা নূরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আলোচনা করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা সহ-সভাপতি রাধা রানী বর্মন, সাধারণ সম্পাদ তাহমিনা আকতার অ্যানি, সদস্য আকলিমা বেগম,রেনু বালা প্রমুখ।

সভায় আলোচকগণ বলেন, বেগম রোকেয়া বাংলাদেশের নারীমুক্তি আন্দোলনেরপথিকৃৎ। সমাজে নারীকে মানুষ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা, নারীর সামনেস কলপ্রতিবান্ধকতা দূরকরারসাহস, যুক্তি ও আপনপ্রত্যয় নিমার্ণের লক্ষ্যে আজীবন তিনি সংগ্রাম করেছেনÑ লেখনী ধরেছেন, স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, সংগঠন গড়ে তুলেছেন। বেগম রোকেয়া সমাজে নারীর যে অব¯’ান দেখতে চেয়েছিলেন তাঁর মৃত্যুর ৮৮বছর পরও আমরা তার কাছাকাছিও পৌঁছাতেপারিনি। বাহ্যিকভাবে হয়তো অনেক পরিবর্তন হয়েছে বলে বোধ হবে; নারী এমনকি প্রধানমন্ত্রীও হ”েছন। কিš‘ সমাজমননে যেন আরও অবক্ষয় ঘটে গেছে।

সারাদেশে নারী-শিশুধর্ষণ-নির্যাতন-হত্যা এক ভয়াবহরূপনিয়েছে। দুই বছরের শিশু কন্যা বা ৬০ বছরের বৃদ্ধা যে কোন বয়সের নারী; হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা মুসলিম যে কোন ধর্মের নারী; পাহাড়ে বা সমতলে, ঘরে-পথে-স্কুলে-কারখানায় যেকোন ¯’ানে; দিনে বা রাতে যেকোন সময়ে বাংলাদেশে একজন নারী নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অপহরণ, বন্দি করে রেখে গণধর্ষণ, যৌতুকেরজন্য নির্যাতন-হত্যা, বখাটেদের উৎপীড়ন, গণপরিবহনে যৌনহয়রানি-ধর্ষণ, ইন্টারনেটে ব্লাকমেইলসহ ঘরে বাইরে নানা উৎপীড়ন, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে উৎকণ্ঠার বাইরে কোনো নারীর পক্ষে স্বাভাবিক জীবন যাপন কল্পনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

স্বাধীনতার ৫০বছর পরও বাংলাদেশের আইনে নারী সমানাধিকার পাননা। সম্পত্তির উত্তরাধিকার, বিবাহ, বিবাহ-বি”েছদ, সন্তানের অভিভাবকত্ব অর্থাৎপারিবারিক জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনে নারী বৈষম্যের শিকার হন। সমকাজে সমমজুরি আইনে থাকলেও; বাস্তবে প্রায় সমস্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারী, পুরুষের তুলনায় কম মজুরি পেয়ে থাকেন। এখনও সরকারি হিসাবমতেই ১০০ জনে ৫২ জন নারীর বাল্যবিবাহ হয়। নারীরা দিনে প্রায় ১৬ ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ৪৫ ধরনের কাজ করেন। পুরুষের তুলনায় নারীরা প্রায় সাড়ে ৩ গুণ কাজ বেশি করেন। কিš‘ নারীর গৃহ¯’ালির কাজের আর্থিক মূল্য এখনও জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী এখনও এমন যে সন্তান লালন-পালনসহ পারিবার ও ঘর-গৃহ¯’ালির কাজের দায়িত্ব নারীর। এলাকা ও কর্মক্ষেত্রে ডে-কেয়ার সেন্টার, গণ-পরিবহনে নারীর নিরাপত্তাহীনতা, নারীদের জন্য জেলা-উপজেলায় হোস্টেলসহ রাষ্ট্রীয় প্রায় কোন আয়োজন না থাকায় কর্মক্ষম, শিক্ষিত অনেক নারীই কর্মক্ষেত্রে আসতে পারছেন না বা কর্মক্ষেত্র থেকে ঝরে পড়ছেন। একই দেশে এখানে দুই আইন বলবৎ; সরকারি চাকরিতে ৬ মাস সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি আর বেসরকারি চাকরিতে ৪ মাস সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটির নিয়ম বিদ্যমান রয়েছে। সেটাও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেবলখাতা-কলমে; বাস্তবে শ্রমিক নারীরা গর্ভবতী হলে তার কপালে জোটে ছাঁটাই। এছাড়াও নারীকে মানু ষহিসেবে মর্যাদা দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের তেমন কোন উদ্যোগ নেই। বিজ্ঞাপন, নাটক, সিনেমায় নারীকে পণ্যরূপে উপস্থাপন করা হয়। পর্নোগ্রাফি ও মাদক বন্ধে সরকারের কোনকার্যকর উদ্যোগ নেই। মহিয়সী নারীদের জীবন ও কর্ম, বিভিন্ন গণ-আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভূক্তকরণ বা রাষ্ট্র ও সমাজে তেমন মূল্যায়িত হয় না। অন্যদিকে ওয়াজ-মাহফিলে নারীকে নিয়ে অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয়। এই এই বিংশ শতাব্দীতে এসেও ফতোয়া দিয়ে নারীর উপর অত্যাচার করা হয়। এই নির্মম বাস্তবতা ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তনে, সমাজের সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, নারীমুক্তির আন্দোলনে বেগম রোকেয়া আজও প্রেরণার উৎস। বেগম রোকেয়ার সেইআহ্বান‘জাগো গোভগিনী!’ কে ধারণ করে সমস্ত শোষণ, নির্যাতন, অন্ধত্ব, কুসংস্কার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো; নারী-পুরুষের মিলিত সংগ্রাম গড়ে তোলা; মনুষ্যত্ব, সভ্যতা, স্বাধীনতা ও মানবতার দাবি আদায়ের আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ।

error

Share this news to your community