বগুড়া নিউজলাইভ ডটকম ডেস্কঃ করোনা মহামারি থেকে মুক্তি এবং জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। আজ (১১জুন) জাতীয় সংসদে ৩টা ১৮ মিনিটে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে বাংলাদেশের ৪৯তম বাজেটে উপস্থাপন করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্য চলছে।
এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। এসময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানসহ মন্ত্রী এবং এমপিরা উপস্থিত ছিলেন। বেশির সংসদ সদস্য মুখে মাস্ক পরে ছিলেন।
এর আগে প্রথম বার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের পেশ করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। সে বছর ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। আর আওয়ামী লীগ সরকার টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এটা দ্বিতীয় বাজেট। যা আগের বছরের চেয়ে ৪৪ হাজার ৮১০কোটি টাকা বেশি। আর বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট হলো এটি।
এবারের বাজেটের ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩কোটি টাকা। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর প্রস্তাব করা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫কোটি টাকা। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন খাতের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। আর পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে এই বাজেট অনুমোদিত হয়েছে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এতে অনুমোদন দিয়ে স্বাক্ষর করেছেন। বাজেট অনুমোদান সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার বিভাগমন্ত্রী তাজুল ইসলম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
আ হ ম মুস্তফা কামাল এবার তার জীবনের দ্বিতীয় বাজেট উত্থাপন করেছেন। যদিও গত অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে গিয়ে ডেঙ্গু জ্বরের অসুস্থতার জন্য পুরো বাজেট বক্তৃতা দিতে পারেননি। তখন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট উত্থাপন ও বাজেট সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন।
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিরোধে এবার সংসদ অধিবেশনে আসন বিন্যাসে পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার আশপাশের বেশ কয়েকটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। অন্যান্য সংসদ সদস্যদের আশেপাশেও ফাঁকা রেখে আসন বিন্যাস করা হয়েছে। করোনার কারণে প্রথম বারের মতো সংসদে বসে বাজেট অধিবেশন কাভার করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মীরা। এছাড়া প্রতিবছরই বাজেট উত্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাজেট প্রত্যক্ষ করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলেও এবার তা করা হয়নি।
স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে গুরুত্ব দিয়ে আগামী অর্থবছরের (২০২০-২১) ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। জানা গেছে, গত অর্থবছরের চেয়ে এবারের বাজেট আকারে ৪৪ হাজার ৮১০ কোটি বেশি। বাজেটে করোনা ভাইরাস পরবর্তী অর্থনীতি মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাজেটে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। এই দুই খাতে থাকছে বিশেষ প্রণোদনা। তবে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভর্তুকিসহ পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকছে। একই সঙ্গে খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার ওপরে জোর দেওয়া হচ্ছে বাজেটে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ খাতে বরাদ্দ আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে স্বাস্থ্য ও কৃষিসহ ৯টি খাতে। অন্য খাতগুলো হল- সামাজিক নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জনপ্রশাসন, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও ধর্ম। পাশাপাশি বরাদ্দ কমছে শিল্প, গৃহায়ন, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে। ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বের ভিত্তিতে উল্লিখিত খাতে পরিচালনা ও উন্নয়ন উভয়ে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও হ্রাস করা হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলা, ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও গরিব মানুষকে পুনর্বাসনে বেশি বরাদ্দ কাজে লাগানো হবে বলে জানা গেছে।
আসন্ন বাজেটের আকার হচ্ছে, ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এই মোট ব্যয়ের মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৪.৭ শতাংশ, জনপ্রশাসন খাতে ৬.৮ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৬.১০ শতাংশ, প্রতিরক্ষায় ৫.৪ শতাংশ, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় ৪.৯ শতাংশ ব্যয় করা হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে ৫.১ শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুতে ৪.৮ শতাংশ, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে ১৫ শতাংশ, কৃষিতে ৩.৬ শতাংশ, পরিবহনে ১১.৪ শতাংশ, গৃহায়নে ব্যয় করা হবে ১.২ শতাংশ। আর বিনোদন সংস্কৃতি ও ধর্মতে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ, শিল্প ও অর্থনৈতিক খাতে শূন্য দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং বিবিধ খাতে ব্যয় করা হবে ২৯.৪৭ শতাংশ।
বাজেট অধিবেশনে কোন দিন কী:
করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার বাজেট অধিবেশন হবে খুবই সংক্ষিপ্ত। মাত্র ১২ কার্যদিবস চলবে এবারের অধিবেশন। এরইমধ্যে বাজেট অধিবেশন নিয়ে সংসদ সচিবালয় একটি সূচি বা ক্যালেন্ডার তৈরি করেছে। এবারের বাজেটের আকার হতে পারে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। ১১ জুন বাজেট উত্থাপনের পর ১২ ও ১৩ জুন অধিবেশনের মুলতবি। ১৪ ও ১৫ জুন ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা এবং সম্পূরক বাজেট পাস।
পরদিন শুরু হবে প্রস্তাবিত (২০২০-২০২১ অর্থ বছরের) সাধারণ বাজেটের ওপর আলোচনা। ১৬ ও ১৭ জুন আলোচনা শেষে ১৮-২১ জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি থাকবে। এরপর ২২-২৪ জুন আরো তিন দিন বাজেটের ওপর আলোচনা করে ২৫-২৮ জুন চারদিনের বিরতি দেয়া হবে।
২৯ জুন সোমবার বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনা হবে। এদিনই পাস হবে অর্থবিল। ৩০ জুন মূল বাজেট ও নির্দিষ্টকরণ বিল পাস হবে। এরপর আরেকটি বিরতি দিয়ে ৮ বা ৯ জুলাই একদিনের জন্য অধিবেশন বসে ওইদিনই সমাপ্তি টানা হবে। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অধিবেশন শুরু ও বাজেট পেশের দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের বৈঠক বসবে। চলবে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত।
এদিকে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গতকাল (১০ জুন) বিকেল ৫ টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেল একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টম (বাজেট) অধিবেশন শুরু হয়।
অধিবেশন শুরুর আগে সবাইকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে সংসদ ভবন ও অধিবেশন কক্ষে ঢুকতে হয়। এছাড়া নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে নির্ধারিত সংসদ সদস্যদের যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। এজন্য যারা আজ যাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত শুধু তারাই অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। এসময় সবাই মাস্ক পরেছিলেন। সবার তাপমাত্রা মাপা হয়েছে। গতকাল অসুস্থ ও বয়স্ক সংসদ সদস্যরা সংসদে যাননি।
অধিবেশনের শুরুতেই সভাপতিমন্ডলীর মনোনয়ন দেয়া হয়। এরপর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী তিনটি অধ্যাদেশ উত্থাপন করেন। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, সংষদ সদস্য আ স ম ফিরোজ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনা শেষ শোক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়। এরপর সংসদের বৈঠক আজ বিকেল ৩ টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার।