মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সরবরাহের ২ বছরেও ডিজিটাল এক্সরে মেশিন অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে

স্টাফ রিপোর্টারঃ  সাধারণ রোগীদের দুভোর্গ ও চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। সরবরাহের ২ বছর পার হলেও বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতলের অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন কাজে আসছে না। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইনস্টল না করে দেয়ায় সেটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।

এতে দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে জেলা সদরের সরকারী হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের। শুধু দুভোর্গ নয়, বাইরে থেকে ডিজিটাল এক্স-রে করাতে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে দরিদ্র রোগীদের। তবে এতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরেজ ডিপো(সিএমএসডি) ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সায়েন্টিফিক এন্ড সার্জিক্যাল কোম্পানীর। হাসপাতালের পক্ষ বার বার যোগাযোগ করলেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটি চালু করার ক্ষেত্রে(ইনস্টল) কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। ফলে মুলব্যান এক্স-রে মেশিনটির ডিজিটাল অংশ পরিত্যক্ত মেডিক্যাল ইক্যুপমেন্টের মতো হাসপাতালের রেডিওলোজি বিভাগে পড়ে আছে।
বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সুত্র জানায়, ডিজিটাল এক্সরে মেশিনের চাহিদা অনুযায়ি সিএমএসডি’র মাধ্যমে ঢাকার বেঙ্গল সায়েন্টিফিক এন্ড সার্জিক্যাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এক্স-রে মেশিন(৫০০এমএ) সরবরাহ করে। রাতের বেলায় মেশিনটি ট্রাক যোগে হাসপাতালে দিয়ে তারা চলে যায় বলে হাসপাতালে রেডিওলেজি’র টেকনিশিয়ান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন। পরে ২০১৭ সালের আগস্টে এর ডিজিটাল ইউনিট- কম্পিউটার রেডিওগ্রাফি(সিআর) ইউনিটটি সরবরাহ করা হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, দীর্ঘদিন পরে থাকার পরেও এটি ইনস্টল করে দেয়া হয়নি। সুত্র জানায়, বার বার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি জানান হয়। এছাড়া সিএমএসডি সহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিস্টদের জানান হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। প্রথম পর্যায়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে হাসপাতালে সিআর মেশিনটি ইনস্টলের চেস্টা করে। ওই সময় তারা মৌখিক ভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানায়, সফটওয়ার’র সমস্যা রয়েছে। পরে তারা লিখিত ভাবে জানায়, অেেটামেটিক ভোলটেজ রেগুলেটার না থাকার কারনে সি আর মেশিনটি(এক্সরে ইউনিটের ডিজিটাল অংশ) চালু না হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এক্সরে মেশিনের ডিজিটাল ইউনিট সরবরাহের প্রায় দেড় বছর পর চলতি বছরের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিষয়টি বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান হয়।এদিকে সিআর ইউনিট চালু না হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরবাহকৃত এক্সরে মেশিনের(৫০০এমএ) এনালগ অংশ দিয়ে পুরাতন পদ্ধতিতে(এক্সরে ফ্লিম রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে ডেভলপ) এক্সরে কার্যক্রম চালু রাখে। তবে এক্স-রে করার পর ফ্লিম প্রিন্ট করার জন্য কম্পিউটার রেডিওগ্রাফি বা সিআর ইউনিটটি দীর্ঘ সময় ধরে পরিত্যক্তের মতো পড়ে রয়েছে। এর প্রিন্টার, সিআর ইউনিট সহ ক্যাসেট ও ফ্লিম কার্যকর রয়েছে, না অচল হয়ে গেছে সে ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু বলতে পারেছেন না। একাধিক সুত্র জানায় অত্যাধুনিক এই ডিজিটাল এক্সরে ইউনিটের মুল্য অর্ধকোটি টাকার মতো হতে পারে।তবে এর প্রকৃত মুল্য কতো বা এটি কেন ইনস্টল করা হয়নি, সে বিষয়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কিছু বলতে রাজী হননি।

ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যে ব্যক্তি বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে এসেছিলেন, তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে প্রথমে তিনি জানান, এক্সরে মেশিনটি তারা ইনস্টল করে দিয়েছেন এবং তা চালু রয়েছে। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে যখন জানান হয় যে, সিআর ইউনিট তো ইনস্টল হয়নি বলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, তখন তিনি আর কোন মন্তব্য না করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালের আরএমও ডা.শফিক আমিন কাজল জানান, ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি তাদের ইনস্টল করে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ি এটি চালু দেখে হাসপাতালের সংশ্লিস্ট বোর্ড প্রত্যায়ন দিবে। কিন্তুু এরকম কোন প্রত্যায়ন হাসপাতালের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি।প্রথমে এটির সফটওয়ার সমস্যার কথা বলা হলেও পরে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভিন্ন মন্তব্য করে বলে তিনি জানান।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন অত্যান্ত প্রয়োজনীয়। হাসপাতাল থেকে বর্তমানে এনালগ পদ্ধতির এক্সরে করা হচ্ছে। প্রয়োজনের কারণে অনেক রোগীকে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ডিজিটাল এক্সরে করে হাসপাতালের চিকিৎসকদের দেখাতে হচ্ছে।

এনালগ পদ্ধতির কারনে বর্তমানে ৫০/৬০টি এক্স-রে হচ্ছে। হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান চঞ্চল জানান, ডিজিটাল এক্সরে চালু থাকলে হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন অন্তত ২ শতাধিক এক্স-রে হতো। সাধারণ রোগীদের স্বার্থে হাসপাতালের ডিজিটাল এক্সরে ইউনিট দ্রুত চালু হওয়া প্রযোজন। সুত্র জানায়, হাসপাতাল থেকে এক্সরে করতে রোগীদের যেখানে ব্যয় হয় মাত্র ২শ টাকা সেখানে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এক্সরে করতে রোগীদের ব্যয় হচ্ছে ৪ গুন টাকা। এতে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা ব্যয়ও বাড়ছে।

error

Share this news to your community