বগুড়ায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে মুনলাইট অটিষ্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়

বগুড়া (গাবতলী) প্রতিনিধিঃ বগুড়ায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে মুনলাইট অটিষ্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত এলাকায় প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে মুনলাইট অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বালিয়াদীঘি, নশিপুর মহিষাবান ও দূর্গাহাটা ইউনিয়নের শতাধিক প্রতিবন্ধী শিশু –কিশোর বিনা খরচে এখানে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। এলাকায় প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার উপযোগী আগে কোন বিদ্যালয় না থাকায় তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। এ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ায় প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোর ও অভিভাবকদের মধ্যে আশার আলো জাগিয়েছে। এখানে প্রতিবন্ধী শিশুরা লেখা পড়ার পাশাপাশি খেলাধূলা,গান,নাচ,কবিতা আবৃত্তিসহ বিভিন্ন বিনোদনমুলক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। হাতে- কলমে কৃষি শিক্ষা দেয়ার জন্য বিদ্যালয়ের মাঠে সবজি প্লট তৈরী করা হয়েছে। সেখানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা নিজেরাই জৈব সার দিয়ে সবজি চাষ করছে। এতে তাদের পুষ্টির চাহিদা পুরণ হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যে সব শিশুর কথা বলার সমস্যা ও চলাফেরার সমস্যা তাদের জন্য থেরাপির ব্যবস্থা রাখ হয়েছে। তিনজন প্রশিক্ষিত থেরাপিস্ট তাদের নিয়মিতভাবে থেরাপি দিয়ে থাকেন। এলাকার যে কোন ষ্ট্রোক ক্লায়েন্ট ও শারিরীক প্রতিবন্ধী এখান থেকে বিনামূল্যে থেরাপি দিতে পারেন। বগুড়ার গাবতলী থানার বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের সুবাদ বাজারে এই বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়েছে। ২২ এপ্রিল ২০১৫ সাল হতে এটি পরিচালনা করছে বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মুনলাইট ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি। সংস্থার সদস্য আর শুভাকাংখীদের আর্থিক সহযোগিতায় স্কুলের খরচ চালানো হচ্ছে।
এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে তিনটি অটো ভ্যান। শিক্ষার্থীদের বাড়ী থেকে বিদ্যালয়ে আনা ও ছুটির পর বাড়ী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বিনামুল্যে। এখানকার শিক্ষাথীদের কোন ভর্তি ফি নেই। নেই প্রতি মাসে বেতন, টিফিন ফি কিংবা অন্যকোন ফি। বরং প্রতিদিন স্কুলে শিক্ষার্থীদের টিফিন দেয়া বিনামুল্যে হয়। শিক্ষার্থীদের ঈদের নতুন পোষাক, সেমাই, চিনি বিতরণ ও কোরবানির মাংস দেয়া। মাঝে মাঝে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ওষুধ দেয়া হয়। হুইল চেয়ার, ট্রলি,ক্র্যাচও দেয়া হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীকে। প্রতিবন্ধী দিবসসহ সকল জাতীয় দিবস পালন করা হচ্ছে বিদ্যালয়ে। এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহার উপযোগী প্রশস্থ টয়লেট, টয়লেটে যাবার জন্য ঢালুপথ নির্মাণ ও বিশুদ্ধ পানি পানের জন্য রয়েছে টিউবয়েল। বিদ্যালয়ের সামনে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের হাতে লাগানো ফুল ও ফলের বাগান রয়েছে। খেলার জন্য রয়েছে উপযোগী মাঠ। প্রতিদিন শরীর চর্চা করানো হয়। বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের বসার জন্য সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। অভিভাবকরা যেন অলস বসে থেকে সময় না কাটায় এ জন্য অভিভাবকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। শেখানো হচ্ছে সেলাই ও হাতের কাজ। কাপড়ে বিভিন্ন ধরণের নকসা করা শিখানো হচ্ছে। সন্তানের স্কুলের অবসরে কাজ করে তারা আয় করছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অটিস্টিক শিশু স্বর্ণা খাতুন জানায়, তাদের স্কুলে বিনা বেতনে পড়ায়, প্রতিদিন টিফিন দেয়,তাই নিয়তিম স্কুলে আসি। পড়ার পাশাপাশি খেলার সুযোগ পাই এ জন্য আরো বেশী ভালোলাগে। আরেক শিশু ফয়সাল
জানায়, স্কুলে আসলেই ব্যায়াম করার সুযোগ পাই, আগের চেয়ে পা’য়ে এখন বেশী শক্তি পাই তাই নিয়মিত স্কুলে আসি। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী পারভিন জানায়, বাড়ির চেয়ে স্কুলই তার বেশি ভাল লাগ্ধেসঢ়;।
শারীরিক প্রতিবন্ধী সোয়াইবের মা সালমা বেগম বলেন, স্কুলে প্রতিদিন থেরাপি দিয়ে তার ছেলের অনেক উন্নতি হয়েছে। সে এখন হাঁটতে পারে। এই এলাকায় স্কুল তাদের নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
আরেক অভিভাবক জোব্বার আলী জানান, আগে তার ছেলে বাড়ি থেকে বের হত না, এখন প্রতিদিন স্কুলে আসে। খেলাধুলা করে। দিন দিন তার উন্নতি হচ্ছে। বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুর আলম বলেন,গাবতলী উপজেলার প্রত্যন্ত এই অঞ্চলের মানুষ উপজেলার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এলাকায় প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাতো দুরের কথা, তাদের ঘর থেকে বের করা হত না। এখানে প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুল প্রতিষ্টা করে মুনলাইট দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের সকল উদ্যোগ প্রশসংনীয়। মুনলাইট অটিষ্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মোরশেদা বেগম আইভি জানান,শুধুমাত্র মানুষের সেবা করার উদ্যোশেই তারা এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। বন্ধু-বান্ধব আর পরিচিত জনের সহযোগিতায় তারা স্কুল পরিচালনা করছেন। ঢাকার প্রতীক ফুড লিমিটেড নামে একটি কোম্পানী স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের টিফিন দিচ্ছে। তিনি আরো জানান, স্কুলটি বগুড়া জেলার মধ্যে একটি মডেল স্কুল। প্রতিবন্ধীদের স্বার্থে সরকারী সকল সুবিধা ও স্কুলটি সরকারীকরণের দাবি করেন তিনি।
বগুড়া।
error

Share this news to your community