বগুড়ায় গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজের ব্যাপক প্রকোপ ॥ আক্রান্তের সংখ্যা ৪ সহস্রাধিক

স্টাফ রিপোর্টারঃ বগুড়ায় ব্যাপক আকারে গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বগুড়ায় এবারই প্রথম গবাদি পশুর শরীরে এই রোগ দেখা দেয়। নদী তীববর্তী এলাকা গুলোতে এই রোগের প্রকোপ বেশি। এপর্যন্ত জেলায় প্রায় ৪ হাজারের বেশি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

এর মধ্যে আক্রান্ত খামারের সংখ্যা ৫৯টি । তবে জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস বলছে, এটি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে এবং প্রকোপ কমছে। দ্রুতই এটি আরো কমে যাবে। জেলাপ্রাণি সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে খামার পরিদর্শন, উঠোন বৈঠক সহ কৃষকদের (গবাদী পশু মালিকদের মাঝে ) মাঝে সচেতনেতা তৈরী করতে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
প্রানি সম্পদ কার্যালয় সুত্র জানায়,লাম্পি স্কিন ডিজিজ এক ধরনের পক্স ভাইরাস।

দেশে এটি নতুন ভাবে আর্বিভুত হয়েছে।সংশ্লিস্টরা বলছেন,অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে ইতোপুর্বে এরোগ ছড়িয়েছিলো।এইরোগে গরু বা মহিষের চামড়ার নীচে গোটা শরীর জুড়ে গুটি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ক্ষত সৃস্টি হয়। তবে এরোগে মানুষ আক্রান্ত হয় না। আক্রান্ত গবাদি পশুর শরীরে প্রথমে আঁচিল আকারে(ছোট) রোগটি দেখা দেয় ও পরে তা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ক্ষত হওয়া স্থান থেকে চামড়া খসে পড়ে যায়। আক্রান্ত গুরুর মালিকরা বলছেন,ক্ষত স্থান অনেক গভীর হয় এবং সেখান থেকে মাংস খসে পড়ে।

তবে জেলা প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, চামড়ার নীচের অংশে ক্ষত হয়ে চামড়া উঠে যাওয়ায় দগদগে অবস্থা সৃষ্টি হয় বলে অনেকে তা মাংস খসে পড়ে বলে মনে করছেন। সংশ্লিস্টার বলছেন,অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বগুড়ায় লাম্পি স্কিন ডিজিজের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ক্রমান্বয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে।খামার আক্রান্ত হলেও সাধারণ কৃষকদের গবাদি পশুই এরোগে বেশি আক্রান্ত হয়েছে। জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের তথ্যানুযায়ি ১৬ আক্টোবর পর্যন্ত আক্রান্ত গরুর সংখ্যা ছিলো ৭৭৮টি।পরের সপ্তাহে তা আরো বেড়ে যায়।

সর্ব শেষ তথ্যানুয়ায়ি জেলায় এপর্যন্ত আক্রান্ত গরুর সংখ্যা ৪হাজার ১৭১টি। অনেক এলাকায় গবাদি পশুর মালিকদের মধ্যে আতংক দেখা দেয় বলে সুত্র। এটি মারত্মক আকার ধারণ করেছে নদী তীরবর্তী উপজেলা গুলোতে। জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্র জানায়,এপর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গবাদি পশু আক্রান্ত হয়েছে যমুনাতীরবর্তী উপজেলা সারিয়কান্দীতে। এখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১হাজার৩২।এর পরে রয়েছে ধুনট উপজেলায়।এই উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছে ১হাজার২৮টি গরু।

এছাড়া সোনাতলা উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮৯,গাবতলিতে ৪৬৪,শিবগঞ্জে ৩৪৬ এবং বগুড়া সদরে ২০৫টি গরু আক্রান্ত হয়।জেলার আরো ৫ উপজেলাতেও লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত গবাদি পশু রয়েছে। ধুনট উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ভেটেরিনারি সার্জন মনিরুল ইসলাম জানান, তার এলাকায় আক্রান্ত গবাদি পশুর সংখ্যা তুলনামুলক বেশি। নতুন করে আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রকোপ আগের মতোই রয়েছে, বাড়েনি আবার কমেও যায়নি। বগুড়া সদরের খামারি চাঁন মিয়া জানালেন,তার খামারে ২২টি গুরু ছিলো। অক্টোবরের প্রথম দিকে ২টি গুরু ওই রোগে আক্রান্ত হলে ভয়ে দ্রুত তিনি খামারের সবকটি গুরু লোকসানে বিক্রি করে দেন। পরে এই রোগ সর্ম্পকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আক্রান্ত গুরু ভালো হয়। এতে তিনি আবারো গরু কিনেন। তবে আবারো তার ৩টি গরু আক্রান্ত হয়েছে। এগুলো ভালো হতে দেরি হচ্ছে।

বগুড়া জেলা প্রানিম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান,উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকলেও উপজেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জনের সঙ্গে সেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন। দ্রতই এর প্রকোপ কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করে জানান, বগুড়া এবারই প্রথম গাবদি পশু এধরনের রোগে আক্রান্ত হলেও এনিয়ে কৃষক ও খামমারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।

এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত কোন গরুর মৃত্যু হয়নি। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার কমে যাবে। নদীতীরবর্তী এলাকায় এই রোগের প্রকোপ অন্য এলাকার তুলানায় বেশি হয় বলে তিনি জানান।

error

Share this news to your community