নওগাঁয় শুরু হয়েছে কৃষক নিবন্ধন

নওগাঁর কৃষকের ক্ষেতের ধান সরকারি গুদামে সরাসরি বিক্রি করে টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা

নওগাঁ প্রতিনিধিঃ রাজনৈতিক ও হয়রানি ছাড়া সরাসরি সরকার কৃষি অ্যাপসের মাধ্যমে কৃষকদের সরাসরি কৃষি
সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে স্থির করে। এই লক্ষ্যে সরকার সারাদেশের মধ্যে পাইলট প্রকল্প
হিসেবে ১৬ জেলার সদর উপজেলায় কৃষি অ্যাপসের কার্যক্রম শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে
নওগাঁ সদর উপজেলায় কৃষক নিবন্ধন শুরু হয়েছে। নিবন্ধনের শেষে কৃষক নিজের ধান সরকারি
গুদামে সরবরাহ করে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করবেন। গত তিন দিনের সদর উপজেলায় প্রায়
১২শ’ কৃষক নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।
জানা গেছে, প্রতি বছর ইরি-বোরো ও বোরো আমন ধান সরকারি ভাবে নায্য মূল্যে কিনলেও
অধিকাংশই কৃষক তাদের উৎপাদিত ধান রাজনৈতিক ও সরকারি কর্মকর্তার হয়রানি ছাড়া
সরকারি গুদামে সরবরাহ করতে পারেন না বলে অভিযোগ উঠে। কৃষকদের কোন হয়রানি ছাড়াই
সরকার সরকারি গুদামের ধান সংগ্রহ ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে চলতি বোরো
আমন মৌসুমে কৃষি অ্যাপসের মাধ্যমে কৃষক নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই অংশ
হিসেবে কৃষি অ্যাপস দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ১৬ জেলার সদর উপজেলায় পাইলট প্রকল্পের কার্যক্রম
শুরু হয়েছে। এর মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও পৌর সভায় ২৫ নভেম্বর থেকে
ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত দুই দিনেই প্রায় ১২শ’ কৃষক নিবন্ধন সম্পন্ন
করেছেন।
নিবন্ধন সফল করতে জেলা প্রশাসন, খাদ্য বিভাগ ও কৃষি বিভাগ গত কয়েক দিন থেকে
আলোচনা সভা, মাইকিং, পেষ্টারসহ ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করে। নওগাঁ পৌরসভার (ব্লক) উপ-
সহকারি কৃষি কর্মকর্তা শামছুল আলম জানান, নওগাঁয় এই প্রকল্পে সফল করতে ইত্যে মধ্যে
চালানো হয়েছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। একজন কৃষক জাতীয় পরিচয়পত্র, কৃষি কার্ড ও তার
ব্যবহৃত নিজস্ব সেল নম্বর নিয়ে ৭ ডিসেম্বর নিবন্ধন করতে পারবেন। একজন কৃষক একবার
নিবন্ধন করলে সারাজীবন এই কৃষি সুবিধা পাবেন। সদর উপজেলার বক্তারপুর (ব্লক) উপ-সহকারি
কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, কৃষি নিবন্ধন সম্পন্ন হলে কৃষকের সেল ফোনে
ম্যাসেজ পাবেন। এরপর খাদ্য বিভাগে ধান দিতে আগ্রহী কৃষকরা ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে
আবেদন করবেন। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ খাদ্য সংগ্রহ কমিটি আবেদনকারিদের
মধ্যে থেকে কৃষি অ্যাপসের মাধ্যমে লটারির করে কৃষকদের তালিকা করবেন।
বক্তারপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন, করিম শসছের আলী জানান, কৃষি নিবন্ধনের প্রচার শুনে
উদ্বুদ্ধ হয়ে সরকারি-সুযোগ-সুবিধা নিতে নিবন্ধন করছেন। ইত্যে পূর্বে তারা কৃষি
কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি কৃষি সুবিধা পেয়েছেন।
নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতোয়ার হোসেন জানান,
কোন দালাল বা ফরিয়া ছাড়াই ইউনিয়ন পরিষদের কৃষক নিবন্ধন হয়ে সরকারি গুদামে ধান সরবরাহ
করতে পারবেন। বিগত বছর বা ধান কেনার মৌসুমে কৃষকরা রাজনৈতিক ও সরকারি
কর্মকর্তার হয়রানি হতে হতো। এই অ্যাপসের মাধ্যমে ধান কৃষকরা সরকারি গুদামে দিলে কোন
হয়রানি হতে হবে না। নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৪ সালে
নওগাঁ সদর উপজেলার ৪৬ হাজার কৃষক সরকারি কৃষি কার্ড পান। এদের মধ্যে অনেকেই মারা
গেছেন। বর্তমানে ৫৫ হাজার কৃষক রয়েছেন। দীর্ঘ ৫ বছরেও নতুন করে তালিকা না হওয়ায়
অনেকেই সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। এ জন্যে দ্রুত সরকারি ভাবে নতুন করে
আবারো কৃষকদের তালিকা করার জন্যে দাবি জানান। সদর এলএসডি’র ভারপ্রাপ্ত খাদ্য
কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, নিবন্ধন শেষে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারি গুদামে ধান
দেওয়ার জন্যে আবেদন করতে হবে কৃষকদের। এরপর প্রশাসনের কমিটি অ্যাপসের মধ্যেমে লটারি
করে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করবে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মফিদুল
ইসলাম জানান, কৃষকরা নির্দিষ্ট সময় এবং স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ইউনিয়ন
পর্যায়ে ধানের আর্দ্রতা যাচাই-বাছাই করে কোন গুদামের ধান সরবরাহ করতে তা জানতে
পারবেন এবং ওই অ্যাসের মাধ্যমেই কৃষকরা টাকা পাবেন তার নিজেস্ব ব্যাংক হিসাব নাম্বারে।
নওগাঁ সরকারি খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানান, মোহাজের হাসান জানান, সরকারের এই মহতী
উদ্যোগকে সফল করতে ইত্যে পূর্বে সদরের ১২টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের অডিও
ভয়েস প্রচার প্রচারণার জন্যে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও লিপলেট বিতরণ, ম্যাকিংও করা
হয়েছে। এই অ্যাপসের মাধ্যমে ধান নেওয়ায় কৃষকদের হয়রানি ও সময় দুটোই বাঁচবে। গত
তিন দিনের সদর উপজেলায় ১২শ’ কৃষক নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।

তিনি আরো জানান, নিবন্ধনের সময় বড়, মাঝারি ও ছোট কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। লটারির
মাধ্যমে কে কত ধান গুদামে দিতে পারবেন তা এই অ্যাপসই নির্ধারণ করবে। আশা করা হচ্ছে
সদরে প্রায় ৪০ হাজার কৃষক নিবন্ধনের আওয়াতায় আসবেন।
জেলা প্রশাসক হারুন-অর রশীদ জানান, কৃষি অ্যাপসের মাধ্যমে ধান কেনার
উদ্যোগ সরকারের একটি যুগান্তরী পদক্ষেপ। যে কৃষকরা ধান সরকারি গুদামের দেওয়ার অনুমোদন
পাবেন সেই কৃষকরা স্থানীয় ব্লক সুপারভাইজারের মাধ্যমে ধানের আর্দ্রতা পরিমাপ করবেন।
কোন কৃষকের ধানে আর্দ্রতা যদি কম থাকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না উপজেলা
নির্বাহী কর্তকর্তাকে না জানিয়ে। আর্দ্রতা কম থাকলে বা সন্দেহ হলে উপজেলা নির্বাহী
কর্তকর্তা তা ক্ষতিয়ে দেখবেন। এতে কৃষকদের হয়রানি কমে যাবে। অন্যদিকে ধান সংগ্রহে
অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হওয়ায় কারো সুযোগ থাকবে না।
কৃষকদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্যে সরকারের এই মহতি উদ্যোগ যেন কোন
কর্মকর্তা বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কালো থাবায় যেন বিফলে না যায় সে দিকে সরকারের
উধ্বর্তন মহলের নজর রাখার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

error

Share this news to your community