নওগাঁয় বিজিবির নিকট চোরাচালানে জড়িত ২৯৩ জনের আত্মসমপর্ন

সাইফুল ওয়াদুদ, নওগাঁঃ নওগাঁর সীমান্তবর্তী পোরশা উপজেলার নীতপুর ইউনিয়নের অভাবের সংসার হওয়ায়, ২৯৩ জন নানা বয়সি যুবক পড়াশুনা তেমন করতে পারেনাই। কেউ কেউ বাবাকে কৃষি কাজ কাজে সহযোগীতা করতেন। সঙ্গদোষে গত তিনবছর আগে স্বল্প সময়ে বেশি টাকা আয়ের লোভে গরু চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পড়েন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের সীমানা পার হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে রাখাল হিসেবে গরু আনা-নেয়ার কাজ করতেন। প্রতি জোড়া গরুতে (রাখাল) পেতেন ১০ হাজার টাকা।শনিবার বিকের ৪টায় নওগাঁ ব্যাটালিয়ন (১৬বিজিবি) এর আয়োজনে নীতপুর ক্যাম্পে সীমান্ত অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আত্মসমর্পণ ও আলোর পথে শপথ গ্রহন করেন। নওগাঁ জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন নওগাঁ ব্যাটালিয়ন

(১৬বিজিবি) । চোরাচালানের সাথে জড়িত যুবক আমিরুল ইসলাম বলেন, সীমান্ত পার হয়ে গরু চোরাইপথে আনানেয়া করতাম। আমরা ৪/৫ জন ভোর ৫টার দিকে যেতাম এবং সকাল ৭/৮টার দিকে গরু নিয়ে ভারত থেকে ফিরে আসতাম। ভারতের লোকেরা গরু এগিয়ে নিয়ে এসে দেয়। এরপর আমরা নিয়ে আসতাম। বাংলাদেশে গাই-বাছুর ৪০/৫০ হাজার টাকা দাম। আর ভারতে ৩/৪ হাজার টাকা দাম। মহাজনরা এসব গরু বাংলাদেশে ৪০/৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। আর আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার করে এসে জোড়া প্রতি পাই ১০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ২০ জোড়া গরু পার করেছি। দুই মাস থেকে আর গরু আনানেয়া করিনি। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোন মামলা খাইনি। এলাকায় গত কয়েকদিন থেকে মাইকিং করা হচ্ছে আত্মসমর্পণ এর জন্য। যেহেতু বিজিবি একটা সুযোগ দিচ্ছে এজন্য আসছি। এটা করাতে ভাল হয়েছে।একই গ্রামের এমদাদুল হক বলেন, মাঠে কৃষি কাজ করতাম। দেখতাম এলাকার বেশকিছু যুবকরা গরু আনানেয়া করত। স্বল্প সময়ে তারা বেশ টাকা পেত। এরপর মহাজনদের সাথে পরিচয়। গত ৫বছর থেকে অবৈধভাবে গরু আনানেয়া করেছি। প্রতি জোড়া গরুতে ১০/১৫ হাজার টাকা পেতাম। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ জোড়া গরু নিয়ে আসছি।এছাড়া গরু চোরাচালানের সাথে জড়িত নীতপুর গ্রামের শহীদুল ইসলাম, আব্দুল কাইয়ুম, আব্দুল মালেক সহ কয়েকজন বলেন, আমরা ভুল করে এতো দিন চোরাচালানের সাথে জড়িত ছিলাম। বিজিবি আমাদের আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করায় সুবিধা হয়েছে।নওগাঁ ১৬ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্ণেল একেএম আরিফুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ।এসময় নওগাঁ ১৬ বিজিবি উপ-অধিনায়ক মেজর এটিএম আহসান হাবিব, সহকারী কমিশনার ( ভুমি) সোহরাব হোসেন, সহকারি পুলিশ সুপার (সাপাহার সার্কেল) বিনয় কুমার, পোরশা থানার অফিসার ইনচার্জ শাহিনুর রহমান চৌধুরি, নীতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।সীমান্তের নীতপুর, হাপানিয়া ও করমুডাঙ্গা এলাকার মাদক ও চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত ২৯৩ জন আত্মসমর্পন করেন। পরে শপথ গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়।প্রধান অতিথি রাজশাহী সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, আমরা রাতদিন সীমান্তে পাহারা দিয়ে কাজ করছি। আমার দেশের মানুষ যখন বাহিরে মারা যায় তখন কষ্ট লাগে। আমরা কখনো চাইনা সীমান্তে কোন অঘটন ঘটুক। আমরা অন্যায় ও অপমানের পদ থেকে বেরিয়ে আসতে একটা সুযোগ সৃষ্টি করেছি। তিনি আরোও বলেন, আমরা সীমান্ত কঠোর নীতি অবলম্বন করেছি। যারা সীমান্তে অপরাধের সাথে জড়িত তারা দেশের টাকা দিয়ে বিষ কিনে যুব সমাজকে ধ্বংস ও পুঙ্গ করছেন এতে দেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ে। যারা এখনো ভুল বুঝতে পারেননি তারা আলোর পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান।

error

Share this news to your community