নওগাঁয় প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতার অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

বগুড়া নিউজ লাইভ ডটকম, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বান্দাইখাড়া হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আফজাল ও সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগমসহ ৩মেম্বার এর বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতা দেয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আফজাল মেম্বার ও সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগমসহ ৩মেম্বার প্রতিবন্ধী ও বিধবা ভাতা দেয়ার নামে বান্দাইখাড়া হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের আকিম, লাইলি বেগম, রাবেয়া বেওয়া, বাসন্তি রাণী, শ্রীমতি আরতি ও প্রতিবন্ধী অজিত কুমারসহ প্রায় শতাধিক অসহায় গরীব মানুষের কাছে থেকে প্রতিবন্ধী, বিধবা ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারী সুবিধা দেয়ার নাম করে লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারপরও পাননি বিধবা কিংবা বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। এসব স্বামীহারা বিধবারা এই বৃদ্ধ বয়সে অর্থের অভাবে নানা সংকটে ভুগছেন। বয়সের ভারে রোগে শোকে তারা ভারাক্রান্ত। চিকিৎসাতো দূরের কথা, তিন বেলা খাবার ও জোটানো তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে। নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার বান্দাইখাড়া হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের বরদা পাড়া গ্রামের মৃতঃ জহুর উদ্দিন এর স্ত্রী গেদি বেওয়া জানান, এই বৃদ্ধ বয়সে বেঁচে থাকার জন্য তিনি একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য ঘুরছেন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের দ্বারে দ্বারে। এক সময় বান্দাইখাড়া হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আফজাল ৪ নং ওয়ার্ড বরদাপাড়ার মেম্বার আমাকে ডেকে বলে একটি বিধবা ভাতার কার্ড করতে ১০ হাজার টাকা লাগে। আপনি যদি টাকা দিতে পারেন তাহলে আমার বাড়িতে ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসলেই বিধবা ভাতার কার্ড পেয়ে যাবেন। আমি কোনো মতে টাকা পাওয়ার আশায় নিজ পাড়ার দুদারুদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে সাড়ে ৮ হাজার টাকা আফজাল মেম্বারকে দিলেও আজও আমাকে বিধবা ভাতার কার্ড করে দেয়নি। শুধু বারবার সে আশ্বাসই দেয়, আজ হবে কাল হবে কিন্তু ৩ বছর ঘুরেও তাঁর জন্য একটি বয়স্ক অথবা বিধবা ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেননি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর বয়স সর্বনি¤œ ৬২ আর পুরুষের বয়স সর্বনি¤œ ৬৫ বছর। সে অনুযায়ী গেদি বেওয়রা বয়স্ক ভাতা, কিংবা বিধবা ভাতা পাওয়ার যোগ্য হলেও কেউ তাদের জন্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। প্রতিবেশিরা জানান, প্রায় এক যুগেরও বেশি আগে অর্থসংকটের কারণে চিকিৎসার অভাবে গেদি বেওয়া, লাইলি বেওয়া, রাবেয়া বেওয়াসহ এসব মহিলাদের স্বামী মারা গেছে। গরীব স্বামীর সঞ্চয় বলতে কিছুই ছিল না। পেটের তাড়নায় তাদের ছেলে মেয়েরা যে যার মতো ক্ষেতমজুর ও শ্রমজীবি কাজের মাধ্যমে ক্ষুধা নিবারনে ব্যস্ত। প্রতিবন্ধী অজিত কুমার মোবাইলে সাংবাদিকদের জানান, আমি অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া শিখে কোনো মতে বি,এ পাস করি। সরকার প্রতিবন্ধীদের সাহায্যের জন্য প্রচুর পরিমান অর্থ বরাদ্দ করলেও এ যাবৎ পর্যন্ত আমার ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। এক সময় বান্দাইখাড়া হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের এনাম আলী মেম্বার আমাকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেয়ার নাম করে দুই হাজার টাকা অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে পারলে এনাম মেম্বারসহ কিছু লোক আমার বাড়িতে এসে আমাকে ও আমার পরিবারকে বিভিন্ন রকমের ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে যান। এবিষয়ে আওয়ামীলীগ নেতা আফজাল মেম্বার জানান, আমি এ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৪নং বরদাপাড়ার ইউপি সদস্য কিছু অসাধু ব্যক্তি আমাকে বিভিন্নভাবে হেয় প্রতিপন্য করার জন্য এসব পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তবে এবিষয়ে আমি যদি জড়িত থাকি তাহলে আমার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবে। হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শুকুর আলী সরদার জানান, আমি আফজাল মেম্বার ও সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগমসহ ৩মেম্বার এর বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী, বিধবা ভাতা ও সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ার নামে এসব গরীব অসহায় লোকদের কাছ থেকে অর্থ জালিয়াতির মৌখিক এবং লিখিত আকারের সবেমাত্র অভিযোগ পেয়েছি। তাই আমি আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানাউল ইসলাম স্যারকে এ বিষয়ে লিখিত আকারে অভিযোগ দায়ের করব।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুন অর-রশিদ বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ নেই, তবে আপনারা জানালেন তাই একটি তদন্ত কমিটি করা হবে।

error

Share this news to your community