দুর্নীতিবাজ যেই হোক, ছাড় নয় হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা প্রতিনিধি:
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ধরে রাখার প্রত্যয় ফের ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্নীতিবাজ যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।দুর্নীতি নির্মূলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিও প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন,অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনকারী প্রত্যেকে যেন তারা আইনের আওতায় নিয়ে আসে।

তিনি বলেন, আমি আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই দুর্নীতিবাজ যেই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। দুদকের প্রতি আহ্বান থাকবে যেই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। সাধারণ মানুষের হক যেন কেউ কেড়ে নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বর্তমান সরকারের একবছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির অঙ্গীকার করেছিল ক্ষমতাসনীন আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এক বছরপূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও সেই অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, প্রিয় দেশবাসী,আপনাদের স্মরণ আছে, গত বছর সরকার গঠনের পর জাতির উদ্দেশে ভাষণে আমি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শোধরানোর আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করি। মানুষের কল্যাণের জন্য আমি যেকোনো পদক্ষেপ করতে দ্বিধা করব না। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমি আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই দুর্নীতিবাজ যেই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির নির্মূল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি বন্ধে জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি। মানুষ সচেতন হলে দুর্নীতি আপনা-আপনি কমে যাবে।

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা করে কেউ যেন তরুণদের বিপথে পরিচালিত করতে না পারে, সেজন্য মসজিদের ইমামসহ ধর্মীয় নেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে ৬৫০টি মজজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ হানাহানি থাকবে না। সব ধর্ম-বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। সবাই নিজ নিজ ধর্ম যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে সক্ষম হচ্ছেন।

শেখ হাসিনা আরও বলেন,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের শাসনে বিশ্বাসী। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের রায়ই হচ্ছে ক্ষমতার পালাবদলের একমাত্র উপায়। যেকোনো শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে অযৌক্তিক দাবিতে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডকে আমরা বরদাস্থ করব না।

তিনি বলেন, এর আগে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা দেখেছেন আপনারা। বাংলাদেশের মাটিতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের পুনরাবৃত্তি আর হতে দেওয়া হবে না।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভাষণের শুরুতেই সবাইকে খ্রিষ্টীয় নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ আমাদের জাতীয় জীবনে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর উদযাপিত হতে যাচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। আগামী ১৭ই মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার শুভ সূচনা হবে।

সরকার যে আগেই ২০২০-২১ সালকে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন,২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানমালা যুগপৎভাবে চলতে থাকবে।

এই উদযাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতা-সর্বস্ব নয়, এই উদযাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা; স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া।

ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুলভোটে বিজয়ী হয়ে গত বছর ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করে।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমার চতুর্থবার শপথ নেওয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি আজ। আমি এই শুভক্ষণে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি জাতীয় চার- নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। মুক্তিযোদ্ধাদের আমি সালাম জানাচ্ছি।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট হত্যাকান্ডের শিকার বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের কথা গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কথাও তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের যে নেতাকর্মীরা নিহত হয়েছেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নি সন্ত্রাস এবং পেট্রোল বোমায় যাদের প্রাণ গেছে তাদের সবার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী আহত ও স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণ রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমগুলোতে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।

error

Share this news to your community