রাজশাহীতে নূরের নতুন উদ্ভাবন ‘নূর ধান’

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী, বগুড়া নিউজলাইভ ডটকমঃ কৃষক পর্যায়ে নিরলসভাবে কাজ করছেন রাজশাহীর তানোরের গোল্লাপাড়ার কৃষক নূর মোহাম্মদ। তার এবারের নতুন উদ্ভাবন দেশের সবচাইতে চিকন উচ্চ ফলনশীল ধান। গত ছয় বছরের গবেষণায় এই নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন কৃষক নূর মোহাম্মদ। নাম দেওয়া হয়েছে ‘নূর ধান’। চিনি গুঁড়ার মতোই চিকন, তবে চিনি গুঁড়ার চেয়ে লম্বা। দেশের ঐতিহ্যবাহী দাদখানি, রাধুনিপাগল, কালোজিরা, বাঁশফুল, কাটারি ভোগের চেয়েও নূর ধানের চাল অনেক চিকন।
কৃষি গবেষক নূর মোহাম্মদ জানান, দেশের কোনো চিকন ধানেরই বিঘা প্রতি ১০-১২ মণের বেশি ফলন হয় না। তার উদ্ভাবিত নতুন ‘নূর ধান’ আমন ও বোরো দুই মৌসুমেই আবাদ করা যাবে। ধানের গড় ফলন হবে আমন মৌসুমে বিঘাপ্রতি ১৭ মণ ও বোরো মৌসুমে বিঘাপ্রতি ২১ মণ। সুগন্ধি না হলেও এই চালের ভাত খেতে ভালো লাগবে। তিনি আরো জানান, এবার আমন ২০২১ মৌসুমে তার গবেষণা মাঠে তার উদ্ভাবিত দুই জাতের ধান কাটা হয়েছে। একটি চিকন ‘নূর ধান’ অপরটি ‘খরাসহিষ্ণু ধান’। ধান কাটা মাড়াই ও ঝাড়াই শেষে শুকনা ওজনে চিকন ‘নূর ধান’ বিঘাপ্রতি ১৭.৫ মণ ও ‘খরাসহিষ্ণু ধান’ বিঘা প্রতি ২০ মণ ফলন পাওয়া যায়।
আলাপকালে স্থানীয় কৃষকরা জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রায় প্রতি বছরই খরায় নষ্ট হতো কৃষকের জমির ধান। সেই ধান রক্ষায় কাজ শুরু করেন কৃষক নূর মোহাম্মদ। এজন্য নিজের মাটির ঘরটি বানান গবেষণাগার। দেশীয় জাতের উন্নতি ঘটিয়ে ধানের জীবনকাল কমিয়ে আনেন। ফলন বাড়ান। ফলে জমিতে পানি কম লাগে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে ফসল রক্ষা পায়। খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে কীভাবে কম পানি দিয়ে এবং কম সময়ে বেশি ধান ঘরে তোলা যায়, তা নিয়ে করছেন নিরন্তর গবেষণা। উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে বহু জাতের ধানের জিন সংমিশ্রণ করে একটি আধুনিক উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেন।
তানোরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডিএফএম ইমদাদুল ইসলাম বলেন, কৃষিক্ষেত্রে নিত্যনতুন প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে দ্রুত বাস্তবায়ন ও এলাকার কৃষকদের মধ্যেও নিত্যনতুন প্রযুক্তি বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন কৃষক নূর মোহাম্মদ। তৃণমূল কৃষক পর্যায়ে ধানের নতুন নতুন সারি উদ্ভাবন হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা বিভিন্ন মৌসুমে নতুন নতুন দেশিবিদেশি জাতের ধানের অবস্থা তাদের নিজ এলাকায় দেখার সুযোগ পেয়েছেন। কৃষকরা তাদের পছন্দের জাতসমূহ চিহ্নিত করে বীজও সংগ্রহ করতে পারছেন। সে জন্য এলাকায় উফশী জাতের সম্প্রসারণ ত্বরান্বিত হচ্ছে। খরাসহিষ্ণু সারিগুলোর জীবনকাল কম হওয়ায় প্রাকৃতিক দূর্যোগ শুরুর আগেই ধান কেটে ঘরে তোলা যাচ্ছে। আগাম ওঠার কারণে সেচের খরচ কম হচ্ছে। এ কারণে সারিগুলো বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য উপযোগী।

error

Share this news to your community