বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ

বগুড়ানিউজলাইভ ডটকম, ঢাকা:মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল)ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানোর এ আদেশ দেন।
আদালতের ধানমন্ডি থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) উপ-পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আসামি মাজেদকে ধানমন্ডি থানার ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারার (সন্দেহমূলক) মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদনসহ কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়েছে। বিচারক আবেদন মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) বেলা ১২টার পরে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আসামি মাজেদের পক্ষে কোনও আইনজীবী ছিলেন না।
এর আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার (৬ এপ্রিল) রাতে মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারের আগে মাজেদ কোথায় ছিলেন তা পুলিশের জানা ছিল না। তবে করোনা পরিস্থিতিতে তাকে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছিল। এ খবর পেয়ে মিরপুর সাড়ে ১১ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সিটিটিসির উপ-কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি, আবদুল মাজেদ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এরপর আমাদের গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে আটক করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি আবদুল মাজেদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন ট্রান্সনেশনাল ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা আসামির পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে আটক করে আদালতে পাঠিয়েছি।বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ক্যাপ্টেন মাজেদ পলাতক ছিলেন। পলাতক ছয় খুনির মধ্যে ক্যাপ্টেন মাজেদ ছিলেন অন্যতম। তার গ্রামের বাড়ি ভোলায়।
ফিরে দেখা: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে পদে পদে বাধা আসে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন। নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। এরপর ১২ আসামির মধ্যে প্রথমে চারজন ও পরে এক আসামি আপিল করেন। কিন্তু এরপর ছয় বছর আপিল শুনানি না হওয়ায় আটকে যায় বিচারপ্রক্রিয়া।
দীর্ঘ ছয় বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আপিল বিভাগে একজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি আবার গতি পায়। ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির লিভ টু আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। আপিলের অনুমতির প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালের অক্টোবরে শুনানি শুরু হয়। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করেন। ফলে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে হাইকোর্টের দেওয়া ১২ খুনির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এর মধ্য দিয়ে ১৩ বছর ধরে চলা এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়।
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা।

error

Share this news to your community