বগুড়া চাষী বাজার এখন করোনার ‘হটস্পট: বাজারে আক্রান্ত ২৫ জন

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া নিউজলাইভ ডটকমঃ বগুড়া চাষী বাজারের সেই ব্যবসায়ীর আশংকাই সত্য হতে চলেছে। বগুড়ার মাছের আড়তের চাষী বাজার এখন করোনার ‘হটস্পট’। এই বাজারের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের নমুনা পরীক্ষা করলেই ধরা পড়ছে করোনা পজেটিভ।
চাষী বাজারের সাংগঠনিক সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ দাস রঞ্জনের সোসাল মিডিয়াতে দেয়া স্টেটাস টাই সত্যহল। তিনি গত ২৬ মার্চ তার ফেসবুক ওয়ালে আবেদন জানিয়েছিলেন “করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরকার ছুটি ঘোষনা করে বাড়িতে থাকার জন্য বলছে। আর মাছের আড়ৎ বন্ধ রাখার কোন নির্দেশনা না থাকায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কি করে সম্ভব। বগুড়া চাষি বাজারের মত সব জায়গার মাছের আড়ৎ এর একি অবস্হা। তাই প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ আজকেই মাছের আড়ৎগুলো ১০ দিনের জন্য বন্ধ করা হোক তানাহলে যে কোন সময় এই জায়গাগুলোন থেকে মহামারী আকার ধারন করবে। মানুষ ১০ দিন মাছ না খেলে মরবে না। আমি চাষি বাজারের একজন আড়ৎদার হয়ে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করছি মাছের আড়ৎ বন্ধ করার জন্য।”।
কিন্তু তার সেদিনের সেই মানবিক আবেদন কেউ আমলে নেয়নি। এখন সেই মাছের আড়তের বাজার থেকেই বগুড়ায় ছড়িয়ে পড়ছে করোনা। চাষী বাজার এখন হয়ে পড়েছে মানুষের মৃত্যু ফাঁদ।
লক ডাউনের পর থেকে বগুড়ায় এ পর্যন্ত ২৪০ জন করোনা আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে একজন মারাযায়। ১৮ জন সুস্থহয়ে বাড়ি ফেরে। গত বুধবার বগুড়া এই সময়ের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক ৫২ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। এরমধ্যে চাষী বাজারেই ২৫ জন রয়েছে। এতথ্যটি নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন।
চাষী বাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ দাস রঞ্জন নিজেও আত্রান্ত। তিনি জানান, মুখে মুখে প্রশাসনের অনেক পর্যায়ে কথা বলেছিলাম চাষী বাজারের আড়তদার কর্মচারীদের করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য। কিন্তু কোন সাড়া পাইনি। অবশেষে গত ২৬ মার্চ নিজের ফেসবুক ওয়ালে বাজার বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি।
রঞ্জন বলেন, চাষী বাজারে ১৫ টি বড় মাছের আড়ত। ওইসব আড়তে শহরের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩শ জন কর্মচারী কাজ করে। চাষী বাজার হতে শহরের ফতেহ আলী, কলোনী, বকশি বাজার, খান্দার বাজারসহ শহর ও শহরতলীর ২৭ টি বাজারে পাইকাররা মাছ কিনে নিয়ে যায়। এই বাজারের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার রায়ও করোনায় আক্রান্ত। উনার আড়তের ১৯ জন কর্মচারীর নমুনা পরীক্ষা করালে ১৯ জনেরই করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। আমার দোকানের ৪ জন কর্মচারীর পরীক্ষা করালে ৪ জনই করোনা পজেটিভ এসেছে। অনান্য বাজারের পাইকারী মাছ ক্রেতাদেরও নমুনা পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়েছে। এখন বাজারটি বন্ধ থাকলেও এই বাজারের কর্মচারী, মালিকসহ মাছের পাইকাররা ঝুকিতে। অনেকে পরীক্ষা না করে নিজের বাড়িতেই অবস্থান করছেন।
বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, চাষী বাজার কে ‘হটস্পট’ হিসেবে নিয়ে আমরা এর সাথে সম্পৃক্ত মালিক, কর্মচারী এবং অনান্য বাজারের পাইকারী ক্রেতাদের নমুনা পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসবো। চাষী বাজারের ছড়িয়ে পড়া করোনা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।
তিনি আরো জানান, বগুড়ায় করোনার নমুনা পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ১৮৮ জনের বেশী নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। কিন্তু নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন ২ শতাধীকের বেশী নমুনা আসছে। দিন দিন নমুনা সংগ্রহ বেড়েই চলছে। ফলে প্রতিদিনের নমুনার ফলাফল প্রতিদিন দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। পরীক্ষার আওতা বাড়ানো উচিত।

error

Share this news to your community