বগুড়ায় পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের

স্টাফ রিপোর্টারঃ বগুড়ায় পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে শিশু হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের॥ ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর॥ পারিবারিক অভাব অনটন দুর করতে স্কুল ছেড়ে কারখানায় যোগ দিয়েছিলো আলাল॥ ওই জুটমিলে কাজ করছে অনেক শিশু শ্রমিক।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার আফরিন জুট মিলে শুক্রবার পায়ু পথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার শিকার শিশু শ্রমিক আলাল(১২)পরিবারের আর্থিক অনটন দুর করতেই শ্রমিক হিসাবে কারখানায় যোগ দিয়েছিলো।

শিশু বয়সেই পরিবারের বোঝা কাঁেধ নিতে ও পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারনে তাকে স্কুল ছেড়ে শ্রমজীবীর পথ বেছে নিতে হয়।

তার মা দোলেনা বেগম ও খালা রেশমা সহ পরিবারের আরো ৩ সদস্য একই কারখানায় শ্রমিক হিসাবে কর্মরত। আর ওই কারখানায় শুধু আলাল নয়, সেখানো আরো অনেক শিশু শ্রমিক কাজ করছে।

এর সংখ্যা বিশের অধিক হবে বলে কারখানার এক শ্রমিক জানিয়েছেন।

এদিকে আলালকে হত্যার ঘটনায় একই কারখানার গ্রেফতারকৃত কিশোর শ্রমিক যতন কর্মকার(১৭) সহ অজ্ঞাত এক আসামীর বিরুদ্ধে কাহালু থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। সে আলালের পায়ু পথে বাতাস ঢোকানোর কথা স্বীকার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

অপরদিকে শনিবার দুপুরে আলালের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজের (শজিমেক) ফরেনসিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা.মবিন উল ইসলাম ময়নাতদন্ত শেষে জানিয়েছেন, পেটে বাতাস ঢোকানোর কারনে শিশু আলালের বৃহদন্ত্র সহ শরীরের অভ্যন্তরীন রক্তক্ষরন হয়েছিলো।

এছাড়া নাক কান ও মুখমন্ডলে এর প্রভাব পাওয়া গেছে। শরীরে হাওয়া মেশিনের বাতাস ঢোকানোর কারনেই তার মৃত্যু হয় বলে তিনি জানান।

কাহালু উপজেলার ঢাকন্তা গ্রামের দরিদ্র রিক্সা চালক মোজাহার ফকিরের ৩ ছেলে মেয়ের মধ্যে আলাল দ্বিতীয়। বড় ভাই দুলালও একটি কারখানার শ্রমিক। সবার ছোট বোন দুলালী। আলাল তার মা দোলেনা বেগমের সঙ্গে উপজেলার মুরইল এলাকার আফরিন জুট মিলে কাজ করতো।

কয়েক মাস আগে সে ওই কারখানায় স্লাইভার ফিডার (স্পিনিং) পদে যোগ দেয়। তার মা ও খালা ছাড়াও নানী আছমা একই কারখানার শ্রমিক। তার খালা রেশমা জানান, পরিবারের অভাবের কারনে আলালের বাবা মা সুদে টাকা ঋন নিয়েছিলো। সেই কিস্তির টাকা শোধ করতে আলাল চলতি বছর্ইে স্কুল ছেড়ে কারখানায় কাজ করা শুরু করে। মজুরীর টাকা মায়ের হাতে তুলে দিতো।

সে মায়ের সঙ্গে কারখানার ভিতরেই শ্রমিকদের থাকার ঘরে থাকতো। পঞ্চম শ্রেনীতে পড়া অবস্থাতেই লেখাপড়া ছাড়ে পরিবারের স্বচ্ছলতা আনতে। আর এর পরেই কারখানাতেই বন্দী হয়ে পড়ে তার শৈশবের উচ্ছ্বাস, স্কুল, খেলা ধুলা সহ সবকিছু। সাপ্তাহিক ছুটি ছিলো না। শুক্রবারও চলে কাজ। সাধারণত শুক্রবারের প্রথম শিফট শেষে শ্রমিকদের মজুরী দেয়া হয় বলে শ্রমিক রেশমা জানিয়েছেন।

আলালের মতো আরো ২০/৩০ জন শিশু কারখানায় কাজ করে। তবে এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য কারখানার মালিক মোঃ খলিলুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেস্টা করেও পাওয়া যায়নি। কারখানার জিএম রফিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইনি। তবে ঘটনার দিন শুক্রবার সকালে আলাল ও তার মা একই ব্লকে কাজ করছিলো।

আলালের খালা রেশমা জানান, ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি ও তার বোন সেখানে গিয়ে দেখেন শিশু আলালকে অসুস্থ্য অবস্থায় কারখানার গেট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। তার স্বজন ও পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় আলাল হাওয়া মেশিনের পাইপ দিয়ে ক্লিনিং এর কাজ করছিলো। হাসপাতালে নেয়ার পর শুক্রবার বিকালে আলাল মারা যায়।

ঘটনার পর পরেই পুলিশ আলালকে হত্যার অভিযোগে একই জুটমিলের কিশোর শ্রমিক যতন কর্মকারকে গ্রেফতার করে।

আলালের চাচাতো বোন জামাই (দুলা ভাই) জাহিদ সরদার জানান, আলাল হাসপাতালে পুলিশের কাছে জবানবন্ধী দিয়েছে, সেখানে সে বলেছে তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ২ জন শ্রমিক তাকে ধরে রাখে অপর জন তার প্যান্ট খুলে পাচায় নল ঢুকিয়ে বাতাস দেয়।

এ কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। জাহিদ হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানান এবং এ ঘটনায় মালিক পক্ষের হাত রয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

কাহালু থানার ওসি জিয়া লতিফুল জানিয়েছেন, পায়ু পথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত যতন কর্মকার স্বীকার করেছে যে, সে হাওয়া মেশিনের পাইপ দিয়ে আলালের পায়ুপথে বাতাস ঢোকায়।

তবে কি কারনে সে বাতাস ঢুকিয়েছে সে বিষয়ে এখনো জানা যায়নি বলে উল্লেখ করে ওসি জানান, এবিষয়ে তদন্ত চলছে এবং ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসাবে হাওয়া মেশিনের পাইপ জব্দ করা হয়েছে।

এঘটনায় শিশু শ্রমিক আলালের পিতা মোজাহার ফকির বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। কাহালু থানা পুলিশ আরো জানিয়েছে, পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া যতন কর্মকারকে আদালতে পাঠান হচ্ছে।

শনিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে আলালের মরদেহ কাহালুর ঢাকন্তা গ্রামে নেয়া হয়। বিকেল ৩টার দিকে আলালের জানাজা শেষে গ্রামের করবস্থানে দাফন করা হয়।

মা দোলেনা হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের উপযুক্ত বিচার ও ফাঁসি দাবি জানিয়েছেন। বাবা মোজাহারও ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানান। আলালের লাশ তার গ্রামে পৌছলে এলাকার আবাল বৃদ্ধ বনিতা তাকে এক নজর দেখার ভিড় জমায়। এলাকার মানুষ আলালকে একজন শান্ত স্বভাবের ছেলে হিসেবেই জানেন। গ্রাম জুড়ে নামে শোকের ছায়া।

error

Share this news to your community