বগুড়ায় করোনার প্রভাব, লোকশানে জালি টুপি শিল্প

প্রবীর মোহন্ত স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া নিউজলাইভ ডটকমঃ ভাল নেই বগুড়া জালি টুপি কারিগররা। প্রতি বছর পবিত্র ঈদের আগে বাড়তি পরিশ্রম আর বাড়তি আয়, বেশ লাভবান হয় এ পেষার সাথে যুক্ত কারিগর আর বিক্রেতারা। কিন্তু এবারে করোনার প্রভাবে তা ভেস্তে গেছে। সকল মার্কেট বন্ধ, আর দেশের বাহিরে রপ্তানি না থাকায় এখন বেকার হয়ে পড়েছে এ শিল্পের সাথে জড়িত ৫ লাখ নারী-পুরুষ আর ১ লাখ পাইকার। প্রায় কোটি কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে জানান এ শিল্পের সাথে জড়িতরা। বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় এই রমজান মাসে টুপি বিক্রি হয় সর্বাধিক। কিন্তু এবারে তৈরী করা টুপি গোডাউনে পড়ে আছে। পাইকাররা আর কিনতে আসছে না। তাই গা-ছাড়া ভাব নিয়ে বসে আছে কারিগররা। অপেক্ষায় আছে কবে নাগাদ শেষ হবে এই যুদ্ধ।
পাইকাররা জানান, দোকানে দোকানে পাইকারী বিক্রি করতাম। করোনার কারণে দেশের সকল মার্কেট ও বিপণী বিতানগুলো বন্ধ। বিক্রির কোন জায়গা নেই। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা আসছে না, বলছে না কিছু। দেশের বাহিরের অর্ডার নেই। তাই আর নিচ্ছি না। এই পেষার উপর নির্ভর পরিবার। মূলধন থেকে জীবন চালাচ্ছি।


টুপি তৈরী কারিগর বিথি, সাবিনা ইয়াসমিন, সুর্বনা ও শিউলি জানান, সামনেই আসছে ঈদ, পাঞ্জাবীর পাশাপাশী অবশ্যই টুপি চাই। আর এই সুযোগে টুপি দোকানদারদের পাশাপাশি জেলায় প্রায় ৫ লাখ নারী-পুরুষের হাতে তৈরিকৃত এই সকল জালি টুপি দেশের বাজরে চাহিদা মিটিয়ে সৌদি আরব, দুবাই, কাতার, পাকিস্থান, ভারত সহ বেশ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হতো। এবারের চিত্রটা ভিন্ন। মহামারি করোনার প্রভাবে এবারে তাদের হাতে কাজ নেই। মানবেতর জীবন যাপন করছে এ পেশার সাথে যুক্ত শ্রমিকরা। প্রতি বছর ঈদের আগে দিন রাত পরিশ্রম করে মহাজনের অর্ডার তুলে দিতে হয়। কিন্তু এবারে একেবারে ঘরে বসে অলস সময় পার করছি। জীবন-জীবিকা থমকে গেছে। জানিনা আমাদের ভবিষ্যত। খাদ্য থেকে অর্থ সংকটে পড়ছি এখন।
জানাগেছে, ১৯৮৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এ শিল্প এখন লাখ লাখ মানুষের ভরসা। একটি ঘর থেকে যাত্রা শুরু এখন শতাধিক গ্রামে ও জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলাতেও। এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে নামকরণ হয়েছে একটি গ্রামেরও। টুপি ব্যাপরী রাজু আকন্দ জানান, প্রতিবারের ন্যায় এবারো ঈদকে সামনে রেখে এ পেশায় আরো কয়েক হাজার নারী-পুরুষের আগমন ঘটেছে। কিন্ত করোনার প্রাদুর্ভাবে এ সকল টুপি বিদেশে রপ্তানি না হওয়ায় আমরা বেকার হয়ে পড়েছি। আমাদের অর্থ আটকে পড়েছে, মানবেতর জীবন যাপন করছি।
বগুড়ার বাংলাদেশ জালি টুপি ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, টুপি তৈরির সঙ্গে জড়িত ৫ লক্ষাধিক নারী শ্রমিক এবং প্রায় ১ লাখ পাইকারী ব্যাপারি। ওদেরই নিপুন হাতের ছোঁয়া আর সুতা ও ক্রুশ কাটা এই দু’য়ের মিলিত বন্ধনেই তৈরি হয় রকমারি টুপি। ওদের ভাগ্যের সঙ্গে দেশীয় অর্থনীতির চাকাও বেশ জোরোসোরেই ঘুরতো। কিন্তু এ বছর করোনার কারনে বিদেশে এই জালি টুপি পাঠাতে না পেরে গোডাউনে আটকে পরে আছে এই সকল জালি টুপি। বিক্রি করতে পারছেনা গ্রামের কারিগর। মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা।
বাংলাদেশ জালি টুপি এ্যাসেসিয়েশনের বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফিরোজ উদ্দিন সোহাগ জানান, সরকার যেমন গার্মেন্টস শিল্পকে রপ্তানিতে যে ভর্তুকি প্রদান করে তেমনইভাবে এই শিল্পকে টিকে রাখতে হলে সরকার এই জালি টুপি শিল্পতে সহযোগীতার হাত বাড়ালেই নতুন উদ্যম নিয়ে আবারো স্বপ্ন দেখবে তারা।
বাংলাদেশ জালি টুপি এ্যাসেসিয়েশনের বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি জুয়েল আকন্দ বলেন, প্রতি বছর প্রায় আমরা ৫০ কোটি টাকার অধিক বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনি। কিন্ত করোনার কারনে আমরা এই রমজানে কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা লোসকান হয়েছে। এরসাথে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৫ লক্ষাধিক নারী এবং ১ লাখ পাইকারী ব্যাপারি লোসকান গুনছে এবং মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই শিল্পকে টিকে রাখতে হলে এই দুর্দিনে সরকারকে পাশে দাড়াতে হবে। নইলে এই শিল্প ধ্বংস হবে। প্রতি বছর রাজস্ব খাত হতে বঞ্চিত হবে কোটি কোটি টাকা ।

error

Share this news to your community