বগুড়ায় আলু ক্ষেতে লেটব্রাইট॥দুঃশ্চিন্তায় চাষীরা

স্টাফ রিপোর্টারঃ কুয়াশা আর শৈত্য প্রবাহ নিয়ে বগুড়ায় আলু চাষীরা দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। আবাদ ও আগাম জাতের আলুর বাজার ভালো থাকলেও বিরুপ আবহাওয়া এবার বগুড়ায় কৃষকদের মুখ মলিন করে তুলেছে। গত বছরের তুলনায় হেক্টর প্রতি ফলন বেড়েছে প্রায় ৩ মেট্রিক টন। আলুর বাজার নিয়েও কৃষকরা খুশি। এখন আলু চাষীরা ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আগাম বা আগুর জাতের আলুর ফলন তুলতে। দাম ভালো পেয়ে অনেকে মাঠ থেকেই ব্যাপারীদের নিকট আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। তবে গত মাসের শৈত্য প্রবাহ ও কুয়াশার পর চলতি সপ্তাহে আবার শৈত্য প্রবাহ ও কুয়াশার কারনে অনেক এলাকায় লেটব্লাইট বা স্থানীয় ভাবে পচন রোগ দেখা দেয়ায় তা কৃষকদের চিন্তায় ফেলেছে। কৃষকরা জমিতে ছত্রাক নাশক ছিটিয়েও দুঃশ্চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না। তবে কৃষক বিভাগ এক্ষেত্রে আলুর ক্ষেত্রে ছত্রাক নাশক ব্যবহার করতে কৃষকদের নানা ভাবে সচেতনতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে এনিয়ে বড় ধরনের কোন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। ইতোমধ্যে যে সব এলাকায় লেটব্রাইট দেখা দিয়েছে তা নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। কৃষি বিভাগ লেটব্রাইট থেকে আলু ক্ষেত রক্ষায় নিয়ম অনুযায়ি ছত্রাকনাশক ব্যবহারের জন্য কৃষকদের কাছে লিফলেট বিতরণ সহ নানা উদ্যোগ নিয়েছ্


েআলু উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকা হিসাবে পরিচিত বগুড়ায় এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫৫ হাজার ৫শ ৫৪ হেক্টর জমিতে। এপর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ আশা আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ি পৌঁছে যাবে। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ি মোট আবাদের মধ্যে ভালো দামের জন্য আগাম বা আগুর জাতের আলুর আবাদ হয়েছে প্রায় ৮/১০ ভাগ। সে হিসাবে বগুড়ায় আগাম জাতের আলুর আবাদ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ থেকে ৫ হেক্টর জমিতে। স্থানীয় ভাবে এসব আলু আগুর জাতের হিসাবে পরিচিত। ইতোমধ্যে প্রায় প্রায় সাড়ে ১৭ শ’ হেক্টর জমির আলু উত্তোলন হয়েছে। কৃষি বিভাগে বলছে,গত বছরে আগাম জাতের আলুতে হেক্টরে প্রতি আলুর ফলন ছিলো প্রায় ১৪ হেক্টোর সেখানে এবার ফলন হয়েছে সাড়ে ১৬ হেক্টোর। আগাম জাতের আলুর ফলন ওঠা শুরু হয়েছে ডিসেম্বর থেকে কৃষকরা এই ফলন তুলবেন চলতি মাসে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। এরপর ফলন ওঠা শুরু হবে হিমাগারে সংরক্ষন ও বছর জুড়ে রেখে খাওয়ার উপযোগী আলু। বগুড়ার শাখারিয়া এলাকার ইন্দ্রনাথ উজ্জল চন্দ্র ও চন্দ্রনাথ মোদক ৩ ভাই তাদের ১০ বিঘা জমি এক সঙ্গে চাষ করেন। এবার ৫ বিঘা জমিতে আগুর বা আগাম এবং ৪ বিঘা জমিতে সংরক্ষনের আলু চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত ২২/২৩ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছেন জমি থেকেই। গত বছর এসময় তারা প্রকিকেজি আলু ১২/১৩ টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন বলে জানান। বাজারে আগাম জাতের আলুর দাম আরো বেশি। ভালো দাম ও উৎপাদন বেশি হওয়ার তারা খুশি। সেখানকার মাঠ জুড়ে আলু তোলার কাজ করছেন নারী শ্রমিক। আলু তোলার কাজে ব্যস্ত নারী শ্রমিক জো¯œা জানালেন তারা এক সঙ্গে প্রায় ২০ জন জমিতে কাজ করছেন। শাখারিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন পাড়া, নামবালা ও মন্ডল পাড়ার শতাধিক মহিলা শ্রমিক আলুর মৌসুমে ক্ষেতে কাজ করে সংসারে বাড়তি উপার্জন করেন। তবে এবার আগাম জাতের আলুর ফলন বাজারে দাম ভালো হলেও কৃষদের দুঃশ্চিন্তার নাম বিরুপ আবহাওয়া। কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহের কারণে অনেক জমিতে আলু লেটব্রাইট রোগ দেখা দিয়েছে। এরোগ স্থানীয় ভাবে আলু গাছ পচন রোগ বা ‘পচারী’ রোগ হিসাবে পরিচিতি। এতে গাছ শুকিয়ে গিয়ে পাতা পুড়ে যাওয়া মতো অবস্থা হয়, ফলনও হয়না। তাই বিপরীত বক্তব্য পাওয়া শাখারিয়া দক্ষিনপাড়া গ্রামের মুনছুর আলীর। তিনি জানালেন পচন রোগে ৩৫ শতক জমিতে লাগানো আলু গাছ নস্টে হয়েছে। এখন তিনি অন্য সবজি লাগাবেন। তিনি জানালেন শুধু তার জমি নয়, পরিমল কাশেম আলী, আশরাফ আলী, ঠান্ডু মিয়া সহ আরো কয়েক জনের আলু ক্ষেতে পচন রোগ ধরেছে। আলু আবাদের বিষয়ে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক আবুল কাশেম আযাদ জানান, গত বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা আগাম জাাতের আলুর দামও ভালো পাচ্ছেন। তবে বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ ও শেরপুর উপজেলার কিছু এলাকায় প্রায় ৬ হেক্টোর জমিতে লেটব্রাইট রোগ দেখা দিলেও তা নিয়ন্ত্রন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ছত্রাক নাশক স্প্রে করার সহ করনীয় উল্লেখ করে প্রায় ৩০ হাজার লিফলেট কৃষদের মাঝে বিবতরণ করা হয়েছে। আরো ৫০ হাজার লিফলেট লিফলেট বিতরন করা হবে। এছাড়া কৃষকদের সঙ্গে উঠোন বৈঠক করে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থা প্রলম্বিত হলে আলু ক্ষেত ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। তবে এ মুহুর্তের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের শঙ্কা নেই।

error

Share this news to your community