ফলোআপ: ফুলবাড়ীতে সিসা বিষক্রিয়ায় গরু মৃত্যুর ঘটনায় ঘাস ,খড়, মাটি পরীক্ষার রিপোর্টে-মাত্রাতিরিক্ত সীসা থাকায় গোখাদ্য খড় সঙ্কটে চরম দুর্ভোগে খামারিরা

আজিজুল হক সরকার, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি, বগুড়া নিউজলাইভ ডটকম : কারখানার মাটি, ঘাস ও খড়ের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে মাত্রাতিরিক্ত সীসার কারণে গরু মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গবাদি পশুকে খড় -ঘাস খাওয়াতেও ভয় পাচ্ছেন কৃষক- খামারিরা । আগামী এক বছর এ খড় মজুদ করে না রাখতে পারায় গোখাদ্য নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।
ঢাকার চিফ সায়েন্টিফিক অফিসারের কার্যালয় টেকনোলজি এন্ড জুরিসপ্রুডেন্স অনুবিভাগের ডা. রামমোহন অধিকারীর স্বাক্ষরিত রিপোর্ট ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে পৌঁছলে এর বিষক্রিয়ার ব্যাপকতায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।সে পরীক্ষার রিপোর্টে ওই এলাকার ‘ঘাসে’ পাওয়া গেছে ৩০ হাজার পিপিএম ,‘খড়ে’ পাওয়া গেছে ৩০ হাজার পিপিএম এবং ‘মাটিতে ’পাওয়া গেছে ৫ হাজার পিপিএম।যা প্রাণিদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
সরেজমিন পাকড়ডাঙ্গার ব্যাটারি কারখানা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কারখানার তিন বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাকা ধান। কৃষক ভয়ে বাড়িতে ধান কেটে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন না। কেউ বা মাঠে ধান মাড়ছেন। বাড়িতে কেউ নিয়ে গেলেও গবাদিপশুর নাগালের বাইরে রাখছেন; যাতে গবাদি পশু খড় – ধান না খায়।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক খামারিরা বলেন, আমন ধানের খড় দিয়ে তাদের এক বছরের গবাদিপশুর খাবার প্রস্তুত হয়ে থাকে। এখন খড়ে বিষক্রিয়া হওয়ায় তাদের কপাল পুড়েছে! কীকরে তারা সামনের এক বছর গবাদিপশুকে খাওয়াবেন? মাঠের কতদূর পর্যন্ত এই সীসার বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে তা তারা জানেন না। এই বিষয়টিও তাদের কাছে পরিষ্কার করার দাবি জানান প্রশাসনের কাছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, কেউ গরুর মৃত্যুতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।আবার কেউ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ধানের খড় ব্যবহার করতে না পারায়।
জানা যায়, কারখানার সাথে লাগোয়া জমির মধ্যে উত্তরেদিকে আমজাদ হোসেনের দুই একর, মুকুলের এক বিঘা, ডা.আনোয়ারের দুই একর, পশ্চিমে আমজাদের পাঁচ বিঘা, তোফাজ্জলের তিনবিঘা, মমিনুলের এক বিঘা, মাহাবুরের দশ কাঠা, মুকুলের এক বিঘা, মকবুলের দেড়বিঘা, বাদশার এক বিঘা, জহুরুলের এক একর, দক্ষিণে সুলতান হোসেনের তিন একর, মতিবুল, মঞ্জুরুল, মতিয়ারের দশ কাঠাকরে। কারখানার দুশ’ মিটার পরের তালিকাটা আরো অনেক লম্বা হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, কারখানা এলাকার খড়- ঘাস এমনকি ধান পর্যন্ত খাওয়ানো যাবেনা। কতদূর পর্যন্ত সীমানার মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি ‘সমকাল’কে বলেন, যতদূর পর্যন্ত ওই সীসার ডাস্ট ছড়িয়েছে, ততদূর পর্যন্ত।বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চার সদস্যের অনুসন্ধানী দলের রিপোর্ট কবে আসবে জানতে চাইলে তিনি ‘সমকাল’কে বলেন, এখনো জানিনা ; তবে আসলেই জানতে পারবেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ওই এলাকার সিসাযুক্ত খড়গুলো পুড়িয়ে ফেলা হবে এবং বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন জানান,আমি ওই এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলবো। প্রাণিসম্পদ দপ্তরেও কথা বলে এর একটা সুরাহা করবো। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে এবং ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেব।

error

Share this news to your community