ধুনটে দুস্থদের খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির চাল আত্মসাত

বগুড়া নিউজলাইভ ডটকম, ধুনট প্রতিনিধিঃ বগুড়ার ধুনটে গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও এক ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধ্যব কর্মসুচির হতদরিদ্রদের নামে বরাদ্দ দেওয়া সরকারী চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে, একই ব্যক্তির নাম দুই বার ব্যবহার ও ভুয়া নাম তালিকা করে এক বছরের চাল আত্মসাত করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন চাল চোরদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভুক্তভোগী সহ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা মুলক কর্মসুচির আওতায় দরিদ্র জন গৌষ্ঠির খাবার নিশ্চিত করার লক্ষে ধুনট উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ১৪ হাজার দরিদ্র মানুষকে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির আওতা ভুক্ত করা হয়। এসব মানুষদের খাবারের জন্য আপাত কালীন সময়ে ১০ টাকা কেজির দরে মাথাপিছু ৩০ কেজি চাল বিক্রির জন্য ২০ জন ডিলার নিয়োগ করা হয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাধ্যমে হতদরিদ্রদের নাম তালিকা করে প্রায় চার বছর ধরে খাদ্য বান্ধব কর্মসুচির চাল বিক্রি করা হলেও তা বেশীরভাগ দরিদ্র মানুষের ভাগ্যে জোটেনি এ চাল। গত ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঈনুল হাসান মুকুল স্বাক্ষরিত এক হাজার একশত ৭৯ হতদরিদ্র মানুষের যে তালিকা করা হয়েছে তার বেশীর ভাগই ভুয়া । ওই তালিকায় বড়বিলা গ্রামের বাসিন্দা দেখিয়ে ৯৯২ নং ক্রমিকে মমতা রানী, ১০১২ নং অনিতা রানী, ১০১৮ নং শেফালী রানী, ১০২০ নং সুফিয়া রানী, ১০২১ নং রামকৃষ্ণ, ১০২২ নং কুমারী সোহাগী ১০২৫ নং মুকুল চন্দ্র ও ১০৩৬ নং চায়না রানী সহ বেশ কিছু ভুয়া নাম ব্যবহার করে গত এক বছরের চাল আত্মসাৎ করা প্রমান পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধান করে বড়বিলা গ্রামে কোন হিন্দু পরিবারের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। করোনা ভাইরাসে কারণে একই গ্রামের দিনমজুর সহ নি¤œ আয়ের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষের কর্মসংস্থান বন্ধ হওয়ায় অনেক পরিবারের লোকজন অনাহারে অর্ধাহারে রয়েছে।
তাদেরই একজন আব্দুস ছালামের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন জানান, এক বছর আগে ১০ টাকা কেজির চাউল বিতরনের তালিকায় তার নাম লিপিবদ্ধ করা হলেও গত এক বছরে তাকে চাউল অথবা রেশন কার্ডটি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। গ্রামবাসী জানান, ৪/৫ মাস আগে মারা যাওয়া ১০৪৬ ক্রমিকের আব্দুস ছাত্তারের নামে চাল তার পরিবারের কাউকে না দিয়ে আতœসাত করা হচ্ছে।
আংগুর মোল্লা জানান, তার নাম ১১০৫ ও ১১২১ নং ক্রমিকের ডবল করে লিপি বদ্ধ করে তাকে এক নামে চাল দেওয়া হলে বাকীটা চেয়ারম্যান মেম্বার ভাগাভাগি করে খাচ্ছে। বড়বিলা পুর্বপাড়া গ্রামের বদিউজ্জমান ও চান মিয়া জানান, তালিতায় নাম অন্তরভুক্ত করার সময় গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার আকতার হোসেন মজনুকে ২০০ টাকা করে দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে তার দাবী ছিল আরো টাকার, সেই টাকা দিতে না পারায় মেম্বার মজনু লোক মাধ্যমে জানায়, আমাদের নামে কার্ড হয়নি। চাল উত্তোলনের কার্ডটি নিজ হেফাজতে রেখে তিনি এক বছরের চাউল আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি জানা জানি হওয়ায় ওই মেম্বার আমাদের সাথে আপোষ মিমাংসা করার জন্য পাড়ার মাতব্বর অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক শামসুল হকের কাছে আশ্রায় নিয়েছেন।
এবিষয়ে মাতব্বর শামসুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মেম্বার মজনু তালিকা করার সময় আমাদের পাড়ার বদিউজ্জমান ও চান মিয়া, গেরাম হোসেন ও খালেকের নিকট থেকে যে টাকা নিয়েছিল ওই টাকাসহ ৪ জনের চাল উত্তোলনের কার্ড (ছবি খুলে রেখে ) আমার কাছে জমা দিয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় ভাবে আপোষ মীমাংসার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম দুলাল দুস্থদের চাল আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, চাল বিতারণের জন্য চেয়ারম্যান ১১৭৯ জনের তালিকা প্রস্তুত করেছেন তার শতাধিক নামই ভুয়া। ৭ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য আকতার পারভীন বলেন, চেয়ারম্যান মঈনুল হাসান মুকুল ও মেম্বার আকতার হোসেন মজনু ভুয়া নামের তালিকা করে দুস্থদের খাবারের চাল আত্মসাৎ করার বিষয়টি প্রতিবাদ করায় তাকে পরিষদের সকল কর্মকান্ড থেকে বঞ্চিত করেছেন।
এবিষয়ে গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঈনুল হাসান মুকুল দুস্থদের চাল আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তালিকা করার সময় ভুল বসত কিছু নাম অন্তরভুক্ত হয়েছিল পরবর্তীতে সেগুলো সংশোধনের জন্য চেষ্টাও করা হয়েছিলো। কিন্ত সময় শেষ হওয়ার কারনে সংশোধন করা হয়নি। তবে তালিকা ভুক্ত সবাই চাল পেয়েছন। যদি কেউ না পেয়ে থাকেন তাহলে তার জন্য সংশ্লিষ্ট ডিলার দায়ী। তবে ৭ নং ওয়ার্ডে সদস্য আকতার হোসেন মজনু কিছুটা অনিয়মের কথা স্বীকার করে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য এ প্রতিবেদককে অনুরোধ করেছেন।
ডিলার লিয়াকত আলী লিটন বলেন, অনিয়ম হয়ে থাকলে চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড সদস্যরা করেছেন। তালিকা ও কার্ড চেয়ারম্যান এবং ওয়ার্ড সদস্যরা করেন, তাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী রেশন কার্ড জামা দেওয়ার পর চাউল বিতরন করা হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ) সেকেন্দার রবিউল ইসলাম বলেন, দুস্থদের নামে চাল বিতরনের অনিয়মের বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিয়া সুলতানা বলেন, এবিষয়ে আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

error

Share this news to your community