দেশে নতুন ২ করোনা রোগী শনাক্ত, আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫৬

বগুড়া নিউজ লাইভ ডটকম, ঢাকা: দেশে আরো দুই জনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শাখার পরিচালক হাবিবুর রহমান বৃহস্পতিবার এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে দেশে নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
নতুন করে কারও মৃত্যুর তথ্য না আসায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ মৃতের মোট সংখ্যা আগের মতই ৬ জনে রয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ২৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। হাবিবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে নতুন করে ২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। নতুন আক্রান্ত দুজনই পুরুষ; একজনের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, আরেকজনের বয়স ৭০ এর বেশি।
তারা কীভাবে সংক্রমিত হলেন জানতে চাইলে হাবিব বলেন, আমরা এখনও তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিং করতে পারিনি। ইনভেসটিগেশন করছি।ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৫ জনকে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন আইসোলেশনে আছেন ৭৮ জন। সারা দেশে এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন ১৬ হাজার ৭০০ জন।
বিপুল সংখ্যক প্রবাসী দেশে ফিরলেও অনেকের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কেন – একজন সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, যে সংখ্যায় এসেছে তাদের সবাই কোয়ারেন্টিনে থাকবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। এ সংখ্যা পর্যায়ক্রমে কমে যাচ্ছে। যারা নতুন আসছে, তাদের কোয়ারেন্টিনে নিচ্ছি। যাদের ১৪ দিন হয়ে গেছে, তাদের কোয়ারেন্টিন মুক্ত করছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিচালক জানান, সম্ভাব্য আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা এবং আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ১ হাজার ৭৭০ জন স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে চিকিৎসকদের জন্য ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২৫০টি পারসোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বিতরণ করা হয়েছে।করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ধীরগতি নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হচ্ছে।
এ বিষয়ে এমআইএস পরিচালক বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়েছি। মহাপরিচালক মহোদয় দেশের সব বিভাগের পরিচালকদের জানিয়েছেন, প্রতিটি উপজেলা থেকে অন্তত ২টা করে নমুনা পাঠাতে হবে। আগামীকাল অন্তত এক হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হবে।স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এর আগে জানিয়েছিলেন, ইতোমধ্যে দেশের সরকারি হাসপাতাগুলোতে ৫০০ ভেন্টিলেটর বসানোর কাজ এগিয়ে চলছে। আমদানি পর্যায়ে রয়েছে আরও তিনশ ভেন্টিলেটর। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রয়েছে ৭০০ ভেন্টিলেটর।
ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল,কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের পর মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড করা হয়েছে।
ঢাকায় মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইপিএইচ), আইইডিসিআর ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আইসিডিডিআর বি, আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি, শিশু হাসপাতাল ও চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে শুরু হয়েছে কোভিড-১৯ এর পিসিআর টেস্ট।
ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ মেডিকেল, রংপুর মেডিকেল ও রাজশাহী মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, পর্যায়ক্রমে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করতে চান তারা।
দেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সামাজিক সংক্রমণ পর্যায়ে পৌঁছে কি না তা নিয়ে উদ্বোগ রয়েছে অনেকের মধ্যে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ভাইরোলজিস্ট খন্দকার মাহবুবা জামিল বুধবার সাংবদিকদের বলেন, দেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে, তবে তা মৃদু পার্যায়ে।
সরকার এই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন রুখতে এখন সারা দেশের জনগণকে ঘরে থাকতে বাধ্য করছে। বৃহস্পতিবার থেকে তা কার্যকর করতে প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মাঠে রয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এতদিন কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত ব্রিফ করে এলেও বৃহস্পতিবার থেকে তা হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায়। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদুল্লাহও এদিন ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

error

Share this news to your community