দুপচাঁচিয়া পৌরসভার নব-নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে হলফনামায় পাঁচ মামলা গোপনের অভিযোগ

বগুড়া প্রতিনিধিঃ দুপচাঁচিয়া পৌরসভার নব-নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে হলফনামায় পাঁচ মামলা গোপনের অভিযোগ।দুপচাঁচিয়া পৌরসভার নব-নির্বাচিত বিএনপি মনোনীত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে হলফনামায় ৫টি ফৌজদারী মামলার তথ্য গোপনের প্রমাণ
মিলেছে। এর মধ্যে প্রতারনার একটি মামলায় দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডাদেশ রয়েছে। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর আলম আপীল করেছেন কিনা তা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। এছাড়া ৪/২০০৮ নং দুদকের স্পেশাল একটি মামলা উচ্চ আদালতের ভুয়া স্থগিতাদেশ দিয়ে বিচার বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই মামলায় তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও পৌরসভার সচিব কার্তিক চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে। পরাজিত মেয়র প্রার্থী বেলাল হোসেন এ ব্যাপারে আগামী রোববার/সোমবারের মধ্যে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করবেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার বিরুদ্ধে থাকা ও নিস্পত্তি হওয়া সকল মামলার তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। সাবেক মেয়র বেলাল হোসেন, আদালতের সূত্র ও স্থানীয়রা জানায়, গত ১৩ জানুয়ারি দুপচাঁচিয়া পৌরসভার নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম (ধানের শীষ) বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন, ৬ হাজার ৬৫৬ ভোট। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য সাবেক মেয়র বেলাল হোসেন (জগ) পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪২ ভোট। আওয়ামী লীগ প্রার্থী এনামুল হক রানা (নৌকা) ১ হাজার ২৯ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচনের আগে দাখিল করা মনোনয়নের সাথে হলফনামায় ২.খ.তে তিনটি বিচারাধীন ও ৩.খ.তে ৫টি মামলায় খালাসের তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু তিনি হলফনামায় দুপচাঁচিয়া থানার মামলা নং-০৭, তারিখ ৮/১০/০৭, জিআর নং-১২৭/২০০৭(দুপঃ) দন্ডবিধির ৪০৬/৪২০/১০৯ ধারার মামলার তথ্য গোপন করা সহ আরও ৪টি মামলার তথ্য গোপন করেছেন। মামলাগুলো হচ্ছে (১)২০০৮ সালের ২৫আগস্ট দুদকে দেয়া এ মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। (২) প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান মৃধা গত ২০০১ সালের ৪ নভেম্বর কাহালু থানার জিআর ০১/৯৭ মামলা থেকে তাকে খালাস দিয়েছেন। গত ২০/০৬/২০০৭ইং তারিখে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরোজা আকতার তার দুপচাঁচিয়া থানার জিআর নং-৮/০৭ মামলাটি চুড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করেছেন। (৩) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাহিদুজ্জামান গত ২৫/০৩/২০১২ইং তারিখে দুপচাঁচিয়া থানার মামলা নং-৪ তারিখ ১৭/০৪/২০১০ইং জিআর নং-২৭/১০ মামলার দায় থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। (৪) দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক এসএম ফেরদৌস আলম গত ২৯/০৭/২০০৭ইং তারিখে দুপচাঁচিয়া থানার মামলা নং-১১, তারিখ ১৩/০৭/২০০৭, জিআর নং-৪৭/০৭ মামলায় জাহাঙ্গীর আলমকে দুই বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন। সব মিলিয়ে হলফ নামায় উক্ত জাহাঙ্গীর আলম ৫টি মামলার তথ্য গোপন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুপচাঁচিয়ার পুলিশ রিপোর্টে তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলার কথা উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রয়েছে। দুপচাঁচিয়ার পুলিশ রিপোর্টে উল্লেখিত চারটি মামলার তথ্য হলফনামায় গোপন করা হয়েছে। কিন্তু পাশ্ববর্তী কাহালু থানায় তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বিষয়টি দুপচাঁচিয়া পুলিশের তালিকায় উল্লেখ নেই। এছাড়া দুপচাঁচিয়া পৌরসভার সচিব কার্তিক দাস, তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের একটি মামলার বগুড়ার স্পেশাল জজ আদালতে (নং-০৪/২০০৮ স্পেশাল) বিচারাধীন ছিল।
অন্যতম আসামী পৌর সচিব কার্তিক চন্দ্র দাসের দাখিলকৃত ৩১৫৮/২০১৭ রিট পিটিশনটিগত ০৯/০৪/২০১৯ তারিখে খারিজ হলে তিনি ওই আদেশের বিরুদ্ধে ৩৮৩/২০১৯ লিভ টু আপিল করেছেন মর্মে বগুড়ার স্পেশাল জজ আদলতে আইনজীবি কর্তৃক প্রদত্ত সনদ জমা দিয়ে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করে নিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে ওই ৩৮৩/২০১৯ নং লিভ টু আপিলের আবেদনকারী প্রকৃতপক্ষে মোঃ দিদারুল আলম নামে এক ব্যক্তি। এ প্রসঙ্গে দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক নুরুল ইসলাম বাদল জানান, মামলাটি স্থগিতে হাইকোর্টের ওই আদেশটি সম্ভবত ভুয়া। একারণে এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে এবং সুপ্রিমকোর্টে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। দুপচাঁচিয়া পৌরসভা নির্বাচনে পরাজিত মেয়র বেলাল হোসেন জানান, জালিয়াতির মাধ্যমে নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের হলফনামায় ৫টি মামলার তথ্য গোপন করে নির্বাচনবিধি ভঙ্গ করায় এবং উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল জালিয়াতির বিষয়ে আগামী সপ্তাহে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হবে। এ ব্যাপাে নবনির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মোবাইলে কথা বললে তিনি জানান, আমার জানামতে কোন মামলা গোপন করেনি। আমার প্রতিপক্ষ পরাজিত প্রার্থীরা ষড়যন্ত্রমূলক এসব অপপ্রচার করছে।
error

Share this news to your community