জয়পুরহাটের কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়

জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি, বগুড়া নিউজলাইভ ডটকমঃ দিগন্তজোড়া মাঠে ছেয়ে গেছে সরিষার খেত। সবুজের আগায় হলুদ সরষে ফুল দুলছে বাতাসে। আর সেই ফুলে মৌমাছি তার গুনগুন শব্দে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত। চাষকৃত সরিষায় ফুলের সঙ্গে বেশিরভাগেই দানা এসে গেছে। মাঠ ভরা সরিষার হলদে ফুল আর বীজের এমন সমারোহের দেখা মিলবে জয়পুরহাট জেলার অধিকাংশ ফসলের মাঠে। সেখানকার কৃষকরা এবার সরিষায় বাম্পার ফলনের আশা করছে।
এদিকে ভোজ্যতেলের দাম লাগামহীন। এ জন্য গত বছর সরিষা চাষ না করা কৃষকরাও এ বছর সরিষার চাষ করেছেন। তাই জয়পুরহাটে চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ১৭৫ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।
সরিষা চাষিরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে চার থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। আর সরিষা উৎপাদন হয় পাঁচ থেকে সাত মণ। বাজারে দাম ভালো থাকলে প্রতি বিঘায় ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি সম্ভব। এতে খরচ বাদে বেশি অংশই লাভ থাকে। কিন্তু এবার ভোজ্যতেলের দাম বেশি থাকায় অনেক কৃষক পরিবারে ব্যবহারের জন্য সরিষা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জেলার সদর উপজেলার মোহাম্মদাবাদ ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের সরিষা চাষি বিপ্লব মন্ডল বলেন, আমি প্রতি বছর দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করি। এ বছরও করেছি। ভোজ্যতেলের দাম বেশি হওয়ায় সারা বছর পরিবারে খাওয়া যাবে এমন পরিমাণ সরিষা রেখে দেব। তারপর বাকি অংশ বিক্রি করব।
একই উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের কৃষক পরিতোষ সরকার বলেন, আমি গত বছর সরিষার চাষ করিনি। বর্তমানে বাজারে তেলের দাম অনেক বেশি। তাই খাওয়ার জন্য এ বছর ৩৩ শতাংশ জমিতে সরিষা চাষ করেছি। সরিষার গাছে ফুল এসেছে। অল্পদিনের মধ্যে গাছে গাছে সরিষার দানা আসবে।
আরেক কৃষক এনামুল হক ৪০ শতাংশ জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। তিনি বলেন, সরিষার জমিতে গিয়ে হলদে ফুল দেখলে মন ভরে যায়। এখন গাছ ভালো আছে। অনেক গাছে সরিষার দানা এসে গেছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো ফলন হতে পারে।
কালাই উপজেলার মুলগ্রাম এলাকার চঞ্চল বর্মন মাঠে তিন বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আমন ধান কাটার পর আমার এ জমি পড়ে থাকে। তাই সরিষা চাষ করেছি। জমিতে সরিষা চাষের সময় সার প্রয়োগ করলে বোরো রোপণের জন্য আলাদাভাবে সার দিতে হয় না। এটা আমাদের অনেক উপকারে আসে। সরিষা স্বল্প খরচে একটি বোনাস ফসল যা প্রান্তিক কৃষকদের উপকারে আসে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে সরিষার অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি মৌসুমে জেলার পাঁচ উপজেলায় ১১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা বেশি চাষ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে আর্থিক খরচ ও শ্রম দুটিই কম লাগে। এবার অনেক কৃষক আলুর আবাদ করে সেই জমিতে সরিষার চাষ করছে। এর প্রধান কারণ, বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেশি। আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত অনুকূলে থাকলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে।

error

Share this news to your community