স্টাফ রিপোর্টারঃ চলতি আমন মৌসুমে কৃষক এ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হবে। দেশের ৮ বিভাগের ১৬ জেলার উপজেলা সদরে পাইলট প্রকল্পের। লক্ষ্য স্বচ্ছতা ও মাধ্যসত্বভোগী দুর করে কৃষকদের নায্যমুল্য নিশ্চিত করা। ঘরে বসেই নির্বাচিত কৃষকরা মোবাইল ফোনে ধান বিক্রির নিশ্চয়তা ও বিক্রিত ধানের টাকা পাবেন।
সরকারী খ্যাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনায় এবার ধান ক্রয়ে অনিয়ম,দীর্ঘসুত্রীতা ও ভোগান্তি-হয়রানী রোধ সহ মধ্যসত্বভোগীদের নিকট থেকে থেকে কৃষকদের রক্ষায় এবার কৃষক এ্যাপস চালু হচ্ছে। ধানের নায্যমুল্য নিশ্চিত করতে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা ও কৃষক এ্যাপস ধান সংগ্রহের স্বচ্ছতা সহ প্রান্তিক কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষন হবে। এতে সরকারী ক্রয় অভিযানে ধান দিতে ইচ্ছুক কৃষকরা ঘরে বসেই মোবাইল ফোনে রেজিস্ট্রেশন করে জানতে পারবেন, তিনি সরকারী গুদামে ধান দেয়ার (বিক্রি) জন্য উপযুক্ত ও নির্বাচিত হয়েছেন কিনা। কোন গুদামে কি পরিমান ধান কৃষকরা দিতে পারবেন, সেটাও এই এ্যাপসের মাধ্যমে কৃষকরা জানতে পারবেন। এসব কিছুই করা হবে অনলাইনে। এছাড়া এর মাধ্যমে ঘরে বসেই কৃষকরা তাদের বিক্রিত ধানের ন্যায্য মুল্য পেয়ে যাবেন। রেজিস্টেনের পর শুধু একবার ধান দিতে নিধারির্ত খাদ্য গুদামে যেতে হবে। খাদ্য ও কৃষি সংশ্লিস্টরা একে ধানের ন্যায্য মুল্য নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করছেন। চলতি আমন মৌসুম থেকেই খাদ্য অধিদপ্তর এই ‘ডিজিটাল খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা ও কৃষক অ্যাপ’ চালু করতে যাচ্ছে। এর সকল প্রযুক্তিগত কার্যক্রম শেষ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে সংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদের সমন্বিত প্রশিক্ষণ। এতে উপজেলা প্রশাসন, কুষি বিভাগ, খাদ্য বিভাগ ও ব্যাংক কর্মকর্তারা অর্ন্তভুক্ত রয়েছেন। এই কৃষক এ্যাপটি পরীক্ষামুলক ভাবে এবার দেশের ৮ বিভাগের ১৬ জেলার উপজেলা সদরে চলতি আমন মৌসুমে চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে আগামী বোরো মৌসুমে ব্যাপক ভিত্তিতে এর কার্যক্রম বাড়ানো হবে বলে খ্যাদ্য বিভাগ সুত্র জানিয়েছে। শুধু ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা নয়, কৃষকদের ধানের মুল্য নায্যমুল্য নিশ্চিত করেত এবার আমন মৌসুমে সবচেয়ে রেকর্ড পরিমান ধানও সারাদেশ থেকে সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকদের সুবিধাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এ কার্যক্রমের মুল লক্ষ্য বলে খাদ্য বিভাগ জানিয়েছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল(বিপিসি) কর্তৃত ডিজিটাল খাদ্য শস্য সংগহ্র ব্যবস্থাপনায় কৃষক অ্যাপটি প্রস্তুত করেছে।
সুত্র জানায়, সরকারী খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে অনিয়ম ও প্রকৃত কৃষকদেরনিকট থেকে ধান নেয়ার ক্ষেত্রে মধ্যসত্ব ভোগীরা মুল বাঁধা হয়ে দাড়ায়। এতে কৃষকদের হয়রানী ছাড়াও গুদামে সরসরি কৃষকের নিকট থেকে ধানক্রয় করার কথা থাকলেও নানা কারণে তা সঠিক ভাবে কার্যকর করা হয় না। এর ফলে এক দিকে যেমন কৃষকরা সরাসরি সরকারী সংগ্রহ অভিযানে অংশ নিতে পারে না, তেমনি ধানের ন্যায্যমুল পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন কৃষকরা। এসব বিবেচনা সামনে রেখে এবার ডিজিটাল ব্যবস্থায় কৃষক অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি কৃষক নির্ধারণ ও ধান ক্রয়ের পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা বাড়িতে বসে মোবাইল ফোনে অ্যাপসের মাধ্যমে নিজেদের নাম রেজিস্ট্রেশন করবেন। এক্ষত্রে কৃষি বিভাগের উপ সহকারী কর্মকর্তরা (ব্লক সুপার ভাইজার) তাদের সহায়তা দিবেন। প্রকুত কৃষক যাচাইয়ে বিষয়টি কৃষি বিভাগ নিশ্চিত করবেন। রেজিস্ট্রেশন করা কৃষকদের তালিক পৌঁছে যাবে উপজেলা ধানচাল সংগ্রহ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট। তিনি সংশ্লিস্টদের উপস্থিতিতে এ্যাপের মাধ্যমে প্রকাশ্যে লটারী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। নির্বাচিতদের তালিকা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নিকট পৌঁঁছবে এবং কৃষকদের ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে নির্বাচিত এবং কবে কোথায় কি পরিমান ধান দিতে হবে তা কৃষকদের জানিয়ে দেয়া হবে। ধান ক্রয়ের টাকা কৃষকদের একাউন্টে সরাসরি ব্যাংক থেকে টাকা পৌঁ যাবে। এসবই করা হবে অনলাইনে। রেজিস্টেশন থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে কৃষকরা স্বয়ংক্রিয় ম্যাসেজ পাবেন। এক জন কৃষক ১ বস্তা থেকে ১ মেট্রিক টন পর্যন্ত ধান সরকারী সংগ্রহ অভিযানে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যম রেজিস্ট্রেশনের পর নির্বাচিত হলে দিতে পারবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি হবে দ্রত ও স্বচ্ছ। কৃষি বিভাগের উপ-সহকারীদের মাধ্যমে ময়েশ্চার মিটার নিয়ে কৃষকদের বাড়ি গিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হবে। ফলে গুদামে চাল দিতে এসে ময়েশ্চার(আদ্রতা) বেশি বলে ধান দিতে আসা কৃষকদের এই ব্যবস্থাপনায় আর গুদাম থেকে ধান ফিরিয়ে নেয়ার বিপাকে পড়তে হবে না।
খাদ্য বিভাগ সুত্র জানায়, এবারই দেশে সবচেয়ে বেশি আমন সংগ্রহ করা হবে। সাধারণত বোরো মৌসুমে ধানের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা বেশি থাকতো। এবার আমন মৌসুমেও সরাকারী ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। সারাদেশ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে আমন মৌসুমে, শুধু চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এবার রেকর্ড পরিমান ধান সংগ্রহের সঙ্গে পুর্বের মতোই চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। ধানের সঙ্গে চলতি মৌসুমে চাল সংগ্রহ করা হবে প্রায় ৪ লাখ টন। ‘ডিজিটাল খাদ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাপনায় কৃষক অ্যাপে’র পাইলট (পরীক্ষামুলক) প্রকল্পের আকার অর্ন্তভুক্ত জেলা গুলোর উপজেলা সদর নেয়া হয়েছে। প্রত্যেক বিভাগ থেকে ২টি জেলা থেকে ২টি উপজেলা এর আওতায় থাকছে। এগুলো হচ্ছে-বগুড়া সদর ও নওগাঁ, সাভার ও গাজিপুর সদর, ময়মনসিংহ ও জামালপুর সদর, কুমিল্লা ও ব্রাম্মনবাড়িয়া সদর, বরিশাল ও ভোলা সদর, রংপুর ও দিনাজপুর সদর, যশোর ও ঝিনাইদহ সদর, এবং মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ সদর। এসব উপজেলা থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা সোনালী বা অগ্রনী ব্যাংকের নির্ধারিত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ঢাকায় খাদ্য ভবনে সোমবার থেকে প্রশিক্ষন শুরু হয়েছে। এতে আমন সংগ্রহ অভিযানে ডিজাটাল খাদ্য শস্য ব্যবস্থাপনা সহ কৃষক অ্যাপের বিষয়ে নির্দেশনা ও প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। মোট ৬টি ব্যাচে এসব কমকর্তাদের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত প্রশিক্ষন শেষ হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিস্ট জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের পৃথক ভাবে একই সময়ে মধ্যে প্রশিক্ষন দেয়া হবে। আর আমন মৌসুমের ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে ২০ নভেম্বর থেকে ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি আর চাল সংগহ্র শুরু হয়ে চলবে হবে ১ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
এব্যপারে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. নাজমানারা খানুম জানান, প্রকৃত ও বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষন ও তাদের উৎপাদিত ধানের মুল্য নিশ্চিত সহ ক্রয় অভিযান স্বচ্ছ, হয়রানীমুক্ত এবং মধ্যস্বত্ব ভোগী দুর করতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কৃষকরা যাতে ধানের আদ্রতা নিয়ে যেন কৃষকরা সমস্যায় না পড়েন, সেজন্য খাদ্য বিভাগ ও কৃষি বিভাগের কাছে থাকা মিটারের সঙ্গে আরো ৩ হাজার মিটার কেনা হচ্ছে। কৃষকদের নিকট এ্যান্ড্রুয়েড ফোন যদি না থাকে তাহলে স্বজন বা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার বা কৃষিভিাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা কৃষকদের সহায়তা করবে। ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা এ্যাপস মিলারদের নিকট চাল গম সংগ্রহের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ছোট আকারে প্রথমে এবার পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে এই কৃষক এ্যাপস ব্যবহার করা হচ্ছে। এর প্রচারে লিফলেট মাইকিং ও হাটবাজারে সংশ্লিস্ট উপজেলায় গম্ভীরা দল পাঠান হবে। যাতে কৃষকরা উদ্ধুদ্ধ হয়। এছাড়া স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গেও বৈঠক করা হবে বলে তিনি জানান। মহাপচিালক আরো জানান, রেজিষ্ট্রেশন থেকে নির্বাচিত ও ধান দেয়ার অনুমোদন সংক্রান্ত প্রতিটি ধাপে কৃষকরা স্বয়ংক্রিয় বার্তা পাবেন। এছাড়া বিষয়টি খাদ্য অধিদপ্তর থেকে মনিটরিং করা হবে।
বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এসএম সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন কৃষক অ্যাপের মাধ্যমে সরকারী খাদ্য সংগ্রহ অভিযানের ফলে প্রযুক্তি যেমন কৃষকেদের দোড়গড়ায় পৌঁছে যাবে তেমনি কৃষকরা ধান বিক্রি করে লাভবান হবেন।