বগুড়া নিউজ লাইভ ডটকম: গাজীপুরের টঙ্গীতে আগামীকাল শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। চলবে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি। চলবে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। আলমে সুরার তত্ত্বাবধানে তাবলিগ জামাতের প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশ নেবেন মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা।
এরই মধ্যে তুরাগ নদীর তীরে আসতে শুরু করেছেন মুসল্লিরা। বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিকেল থেকেই টুপি-পাঞ্জাবি পরা মুসল্লিদের আনাগোনা শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।আগামীকাল শুক্রবার বাদ ফজর তাবলিগ জামাতের চিরাচরিত নিয়মানুসারে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সভাপতি-প্রধান অতিথিবিহীন এই আন্তর্জাতিক ধর্মীয় মহাসমাবেশের সূচনা ঘটবে। তবে ইজতেমার মূল আকর্ষণ আম ও খাস বয়ান শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই।
এদিকে, আজ সকালে গাজীপুরে হয়ে গেছে কয়েক দফা বৃষ্টি। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ইজতেমায় আগতরা। এর মধ্যেই চলছে সেখানে মুসল্লিদের ঢল। মুসল্লিদের এই ভিড় অব্যাহত থাকবে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত। টঙ্গী স্টেশন রোড, চেরাগআলী, উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় নেমে হেঁটে ময়দানে এসে নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসল্লিরা।সকাল থেকে কয়েক দফা বৃষ্টি ও যানজটের কারণে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা মুসল্লিদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ভোর থেকেই ইজতেমা মাঠে আসতে শুরু করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। রবিবার আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত এ ঢল অব্যাহত থাকবে। তবে জমায়েতের শুরুতেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসল্লিরা টঙ্গী রেলস্টেশন, উত্তরার কামারপাড়া ও ময়মনসিংহ থেকে আসা মুসল্লিরা গাজীপুরের সালনা পর্যন্ত এসে যানজটে আটকে পড়েছেন।
শুক্রবার থেকে ইজতেমার মূল কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে আম বয়ান শুরু হয়েছে। প্রায় সব জেলার জিম্মাদাররা টঙ্গীর ময়দানে এসে উপস্থিত হয়েছেন। জেলা জিম্মাদারদের উদ্দেশে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে দিক-নির্দেশনামূলক আলোচনাও চলছে।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক জানান, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যেন ইজতেমাগামী মুসল্লিদের দুর্ভোগে পড়তে না হয়। হঠাৎ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় সড়কে জমে থাকা ময়লা ও বালু জমে কাদা হয়ে গেছে। এ কারণে মুসল্লি ও বাসচালকদেরও দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জানান, সকাল থেকেই মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে থাকায় সড়কে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এছাড়া হঠাৎ করে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশ কাজ করছে।
প্রথম পর্বের গণমাধ্যমবিষয়ক সমন্বয়কারী জহির ইবনে মুসলিম জানান, বিশ্ব ইজতেমার তিন দিনের কর্মসূচি সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে এরই মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়েছে। প্রায় দুই মাস ধরে প্রস্তুতির কাজ চলেছে। তুরাগ নদের দুই তীরেই আগত পুণ্যার্থীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।নদের পূর্ব ও পশ্চিম তীরের বিস্তৃত ভূমিতে চটের তৈরি বিশাল শামিয়ানা ৯১টি খিত্তায় বিভক্ত করে বিভিন্ন জেলার মুসলিমদের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ময়দানের উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ১০ হাজার বিদেশি মেহমানের থাকার ব্যবস্থা রেখে আন্তর্জাতিক নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের প্রতিবন্ধী মুসলিমদের জন্য পৃথক নিবাস তৈরি করা হয়েছে।
আগত বিদেশি মেহমানদের সব ধরনের সেবাদানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাঁদের নিজ দেশীয় আবহাওয়া ও রুচির দিকে লক্ষ রেখে থাকার ব্যবস্থা ও শতাধিক আইটেমের খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।তুরাগ নদের এপার-ওপার দুই তীরে সহজ যাতায়াতের জন্য সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ সাতটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ৯ হাজার পুলিশ সদস্যসহ র্যাব ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রায় ১০ হাজার সদস্য নিয়োজিত করা হয়েছে। ময়দানের চারপাশে প্রায় ৪০০ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
এ ছাড়া তুরাগ নদে নৌ টহল, আকাশপথে হেলিকপ্টার টহল ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। ময়দানের আশপাশের উঁচু ভবন, রাস্তা ও প্যান্ডেলের ভেতরে সাদা পোশাক ও ইউনিফর্মধারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন সতর্কতার সঙ্গে। পাঁচটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির।