আজ বাজেট পেশ, জোর দেয়া হবে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে

বগুড়া নিউজলাইভ ডটকম ডেস্কঃ স্বাস্থ্য খাত সংস্কার ও কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিয়ে আগামী অর্থবছরের (২০২০-২১) ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট আজ বিকেলে জাতীয় সংসদে পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত অর্থবছরের চেয়ে এবারের বাজেট আকারে ৪৪ হাজার ৮১০ কোটি বেশি। বাজেটে করোনা ভাইরাস পরবর্তী অর্থনীতি মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ গ্রহনের প্রস্তাব থাকবে। বাজেটে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতকে একেবারে ঢেলে সাজানোর ‘মেগা প্রকল্প’ হাতে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অন্যদিকে কৃষি খাতের উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার ওপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের বিপর্যয়ের মধ্যেই ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করছে বাংলাদেশ। মানুষের জীবন রক্ষা আর জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ: ভবিষ্যত পথ পরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরে আসছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৩.২ শতাংশ বেশি। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের আকার ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। এই বাজেটে মোট ব্যয়ের দুই তৃতীয়াংশই ধরা হয়েছে অনুন্নয়ন ব্যয় বা সরকারী কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। এর পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে সরকারী কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় খরচ হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধে ব্যয় হবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদবাবদ ব্যয় হবে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। ঋণ পরিশোধে ব্যয় বাড়বে ৬ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় করা হবে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত প্রকল্পের উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭২২ কোটি ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচিতে যাবে ২ হাজার ৬ শ’ ৫৪ কোটি টাকা। অন্যান্য উন্নয়ন খাতের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬ শ’ ২৪ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা যা চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ঘাটতির চেয়ে ৩৬ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬শ’ ৮ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়ানোসহ একটি ‘মেগা প্ল্যান’ ঘোষণা করা হবে। এর মধ্যে থাকবে ৩ বছরের মধ্যম এবং ১০ বছরের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা। এই দুই মেয়াদের পরিকল্পনায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এ কথা বলার অবকাশ নেই যে, আমাদের স্বাস্থ্য খাতের বেহাল অবস্থা। এ অবস্থা আমরা আর রাখতে চাই না। বিদ্যুৎ খাতের মতো স্বাস্থ্য খাতে ১০ বছরের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতেই মেগা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই ‘মেগা প্ল্যান’ নিচ্ছি। একসময় দেশে বিদ্যুতের খুবই সঙ্কট ছিল। এখন আমরা বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। যেভাবে আমরা বিদ্যুৎ খাতের সফলতা অর্জন করেছি। স্বাস্থ্য খাতেও দেখিয়ে ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি করোনাভাইরাস মহামারী দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দৈন্য ফুটিয়ে তুলেছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অভাবে রোগীর নমুনা সংগ্রহ যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে, তেমনি আক্রান্তদের সেবা দিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্সের অপ্রতুলতার প্রকাশও ঘটেছে। সেজন্য তড়িঘড়ি করে নিয়োগ দিতে হয়েছে সরকারকে। বিভিন্ন হাসপাতালে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) স্বল্পতার বিষয়ও প্রকাশ্য হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সক্ষমতার ঘাটতিও নজরে এসেছে। সেই অবহেলার গর্ত থেকে এ স্বাস্থ্য খাতকে তুলে আনতে নতুন বাজেটে ‘মেগা প্ল্যান’ ঘোষণা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে থাকছে জনবল নিয়োগ। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্সসহ এ খাতে ঘাটতি পূরণ। এই পরিকল্পনায় উন্নত বিশ্ব থেকে বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক এনে দেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ থেকে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ আনা হবে। তাদের মাধ্যমে দেশে গড়ে তোলা হবে দক্ষ জনবল। স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা আরও বাড়ানো হবে। বিনিয়োগ বাড়ানো হবে অবকাঠামো খাতে। নতুন হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। প্রত্যেক জেলায় গড়ে তোলা হবে গবেষণাগার। এছাড়া মেডিকেল সরঞ্জাম কেনাকাটা করা হবে। মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য ৩৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৭ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন-অনুন্নয়ন মিলে ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় কর্মরত সরকারি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হলে তাদের পদ অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন বাজেটে ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, এভাবেই আমরা স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাব। তবে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয়ের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা অর্জনে গুরুত্ব দিচ্ছি। অনেকে বলছেন উন্নয়ন বাজেটের টাকা কম ব্যয় করে স্বাস্থ্য খাতে ব্যবহার করতে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যয় করার সক্ষমতা কতটুকু। এ মন্ত্রণালয় বছরে ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে পারে না। কিন্তু তাদের সেখানে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলে কোনো লাভ হবে না। এজন্য ব্যয়ের সক্ষমতা আগে বাড়াতে হবে।
কৃষি খাতের বিষয়ে তিনি বলেন, এই কঠিন সময়ে দেশের মানুষকে খাবার দিতে হবে। তাদের নিত্যদিনের জন্য যে সমস্ত জিনিস প্রয়োজন, তা দিতে হবে। গ্রামে-গঞ্জে মানুষকে কাজ দিয়ে ব্যস্ত রাখতে হবে। কৃষি খাতের উৎপাদন আরও বাড়াতে এ খাতকে সমৃদ্ধ করতে হবে। মোট কথা, দেশের জনগোষ্ঠীই হচ্ছে আমার এবারের বাজেটের অগ্রাধিকার। এই হল বাজেটের মূল কথা। আমাদের অর্থনীতির প্রাণ হচ্ছে কৃষি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘এক ইঞ্চি আবাদী জমিও অনাবাদী থাকবে না’ ঘোষণার বাস্তব প্রতিফলন পাওয়া যাবে এবারের বাজেটে। কৃষি হবে শতভাগ যান্ত্রিক কৃষি। অনেক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হবে কৃষি খাতে। আর এজন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হবে। কোভিড-১৯ কৃষি খাতেও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ফেলছে। ফলে কৃষকদের টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি থাকছে নতুন বাজেটে। কারণ কৃষককে টিকিয়ে রাখতে পারলে খাদ্য নিয়ে সমস্যা হবে না।
এজন্য নতুন বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে ২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। এ খাতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ২৩ কোটি টাকা। করোনাভাইরাস মহামারীর অবসান কবে ঘটবে, তার উত্তর কারও জানা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সঙ্কট যতদিন থাকবে, ততদিন বিশাল সংখ্যক গরিব মানুষের খাদ্য সংস্থান করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা সারা বছর ধরে কিন্তু বয়স্ক, বিধবাসহ বিভিন্ন ভাতা এবং বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে অসহায়-গরিব মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করে থাকি। এই কঠিন পরিস্থিতিতে নতুন বাজেটে এ সব কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। করোনাভাইরাস সঙ্কট প্রায় তিন কোটি নিন্ম আয়ের মানুষের রুটি-রুজিতে আঘাত করেছে। তাদের পুনর্বাসনের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। নতুন বাজেটে এ খাতে ব্যয় করা হবে ৩২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বলে। সঙ্কটের এই সময়ে গরিব মানুষকে খাবার দিতে হবে। যে করেই হোক দিতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। আমরা দিয়ে যাচ্ছি। নতুন বাজেটেও তা অব্যাহত থাকবে। সে জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর পাশপাশি বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ১৬ কোটি টাকা।

error

Share this news to your community