সালামের গুরুত্ব¡ ও ফজিলত

মুফতি আমীনুল হক আজাদী
পরিচালক, তাহযীবুল বানাত মহিলা মাদরাসা ,মালতিনগর (মাটির মসজিদ সংলগ্ন ) বগুড়া

 

এক মুসলমান আরেক মুসলমানের সাথে সাক্ষাত হলে যে যে বাক্য দ্বারা সম্ভাষন করে তাকে সালাম বলে। আজ আমরা সালামের গুরুত্ব¡ ও ফজিলত নিয়ে কোরআন ও হাদিস থেকে কিছু আলোচনা করব। ইনশা-আল্লাহ।

সালাম একটি আরবি শব্দ যার উচ্চারণ আরবীতে ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ এবং বাংলায় আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু। এর অর্থ হচ্ছে শান্তি প্রশান্তি কল্যাণ, দোয়া, আরাম, আনন্দ, তৃপ্তি।
সালাম কি ?
সালাম একটি সম্মানজনক, অভ্যর্থনামূলক, অভিনন্দনজ্ঞাপক, শান্তিময় উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন পরিপূর্ণ ইসলামী অভিবাদন। সালামের মাধ্যমে মুসলমান পরস্পরের জন্য মহান আল্লাহর কাছে শান্তি সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে।
সাথে সাথে আস্-সালাম (ٱلسَّلَامُ) আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে একটি এবং জান্নাতের নাম সমূহের মধ্যে একটি জান্নাতের নাম। সুতরাং এটা জিকিরও
সালাম মুসলমানদের পরস্পরে ভালোবাসা, হৃদ্যতা সৃষ্টির কারন :
সালাম মুসলমানদের পরস্পরে ভালোবাসা, হৃদ্যতা সৃষ্টি করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَوَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ
(তরজমা)’তোমরা ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর ইমানদার হতে পারবে না পরস্পরে ভালোবাসা না হলে। তোমাদের কি এমন একটি বিষয়ের কথা বলব, যা করলে তোমাদের পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও।’ (মুসলিম শরীফ : হাদীস নং- ৮১)
সালাম মানব জীবনে সর্বপ্রথম ও পুরাতন সুন্নাত :
হাদিসে এসেছে আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আদম আ. কে সালামের শিক্ষা দেন। যেমন হযরত আবু হুরায়ারা থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসাল্লাম বলেন:
عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ وَطُولُهُ سِتُّونَ ذِرَاعًا ثُمَّ قَالَ اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولَئِكَ مِنْ الْمَلَائِكَةِ فَاسْتَمِعْ مَا يُحَيُّونَكَ تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ فَقَالُوا السَّلَامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ فَزَادُوهُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ فَكُلُّ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ آدَمَ فَلَمْ يَزَلْ الْخَلْقُ يَنْقُصُ حَتَّى الْآنَ
আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ্ তা’আলা আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি করেছেন।
তাঁর দৈর্ঘ্য ছিল ষাট গজ। এরপর তিনি (আল্লাহ্) তাঁকে (আদমকে) বললেন, যাও। ঐ ফিরিশতা দলের প্রতি সালাম কর,
এবং তাঁরা তোমার সালামের জওয়াব কিরূপে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবন করো। কেননা এটাই হবে তোমার এবং তোমার অনাগত সন্তানদের সালামের রীতি।
তারপর আদম (আলাইহিস সালাম) (ফিরিশ্তাদের) বললেন, “আস্সালামু আলাইকুম”। ফিরিশ্তাগণ তার উত্তরে
“আস্সালামু আলাইকা ওয়া রাহামাতুল্লাহ” বললেন। ফিরিশতারা সালামের জওয়াবে “ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ” শব্দটি বাড়িয়ে বললেন।
যারা জান্নাতে প্রবেশকরবেন তারা আদম (আলাইহিস সালাম) এর আকৃতি বিশিষ্ট হবেন।
তবে আদম সনÍানদের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপ পর্যন্ত পোঁছেছে।
জাতীর পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) সালামের প্রচলন ঘটান।
অনুরুপভাবে আল্লাহ তায়ালা জাতীর পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর ক্ষেত্রেও তার প্রচলন ঘটান যেমন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
وَلَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالْبُشْرَى قَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ فَمَا لَبِثَ أَنْ جَاءَ بِعِجْلٍ حَنِيذٍ (৬৯)
আর অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতারা ইব্রাহীমেরে কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল তারা বলল সালাম, তিনিও বললেন-সালাম । অতঃপর অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এলেন! (সুরা হুদ : ৬৯)

ইসলামের প্রথমযুগে অভিবাদন ও সালাম:
عَنْ قَتَادَةَ أَوْ غَيْرِهِ أَنَّ عِمْرَانَ بْنَ حُصَيْنٍ قَالَ كُنَّا نَقُولُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ أَنْعَمَ اللَّهُ بِكَ عَيْنًا وَأَنْعِمْ صَبَاحًا فَلَمَّا كَانَ الْإِسْلَامُ نُهِينَا عَنْ ذَلِكَ

ইসলামের প্রথম যুগে আরব সমাজে ‘আনয়িম সাবাহান’ অর্থাৎ সুপ্রভাত বলে একে অন্যকে অভিবাদন জানানোর প্রচলন ছিল। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জাহেলি যুগের ওই শব্দকে রহিত করে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে অভিবাদন জানাতে নির্দেশ প্রদান করেন (আবু দাউদ: ৪৫৫০)।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الْإِسْلَامِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ وَتَقْرَأُ السَّلَامَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ইসলামের কোন কাজ সবচেয়ে ভালো? রাসুল (সা.) বললেন, ‘খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।’ (বুখারি শরীফ: ১১)

সালামের গুরুত্ব ও ফজীলাত :
আর সালামের গুরুত্ব¡ ও ফজিলত এবং ব্যবহার সম্পর্কে পবিত্র কুরআন-এ আল্লাহ তায়ালা এভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত সালাম না কর।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ (২৭)
হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে প্রবেশকরো না, যে পর্যন্ত আলাপ-পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না কর। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ। (সুরা নুর:২৭)
لَيْسَ عَلَى الْأَعْمَى ….. لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَأْكُلُوا جَمِيعًا أَوْ أَشْتَاتًا فَإِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِنْ عِنْدِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآَيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ (৬১)

তোমরা একত্রে আহার কর অথবা পৃথকভবে আহার কর, তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই। অতঃপর যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ননা করেন,যাতে তোমরা বুঝে নাও।( সুরা নুর : ৬১)
আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ এর সময়ও মোমিনদের অভিবাদন সালাম :
বান্দা যখন আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের অভিবাদন কি হবে ?‘সালাম’ বা ‘শান্তি’ বলে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যেদিন তারা আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে
تَحِيَّتُهُمْ يَوْمَ يَلْقَوْنَهُ سَلَامٌ وَأَعَدَّ لَهُمْ أَجْرًا كَرِيمًا
যেদিন আল্লাহর সাথে মিলিত হবে; সেদিন তাদের অভিবাদন হবে সালাম। তিনি তাদের জন্যে সম্মানজনক পুরস্কার প্রস্তুত রেখেছেন।
(সুরা আহযাব : ৪৪)
তিনি আরো বলেছেন: (জান্নাতে) পরমদয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের বলা হবে, ‘সালাম’।
سَلَامٌ قَوْلًا مِن رَّبٍّ رَّحِيمٍ
করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম। সুরা ইয়াা-সীন : ৫৮

জান্নাতের রক্ষীরা জান্নাত প্রাপ্তদের যেভাবে অভিভাদন জানাবে :
জান্নাতের রক্ষীরা জান্নাত প্রাপ্তদের স্বাগত জানাবেন একইভাবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করতো তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।
যখন তারা জান্নাতের কাছে উপস্থিত হবে, তখন তার দরজা খুলে দেয়া হবে।
وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ
যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা উম্মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে
এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাক, অতঃপর সদাসর্বদা বসবাসের জন্যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশকর। সুরা যুমার : ৭৩
রাসুল সা. এর এরশাদ:
أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ رَدُّ السَّلَامِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু বলেছেন (এক) মুসলমানের ওপর (অপর) মুসলমানের পাঁচটি হক রয়েছে। আর তা হলো- সালামের উত্তর দেয়া; অসুস্থকে দেখতে যাওয়া; জানাযার নামাজে শরিক হওয়া; দাওয়াত গ্রহণ করা এবং হাঁচির উত্তর দেয়া।
(বুখারি ও মুসলিম)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَعْجَزُ النَّاسِ مَنْ عَجَزَ فِي الدُّعَاءِ، وَأَبْخَلُ النَّاسِ مَنْ بَخِلَ بِالسَّلامِ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,সবচেয়ে বড় অক্ষম সে, যে দু‘আ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে এবং সবচেয়ে বড় কৃপণ সে, যে সালাম দিতে কৃপণতা করে।

সালামের আদব সমূহ
১. সালামের শব্দ :
সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘আস-সালামু আলায়কুম’ বলা । عليك السلام (আলায়কাস সালাম) বলা সুন্নাত নয়।
عَنْ أَبِى جُرَىٍّ الْهُجَيْمِىِّ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ عَلَيْكَ السَّلاَمُ يَا رَسُوْلَ اللهِ. قَالَ لاَ تَقُلْ عَلَيْكَ السَّلاَمُ فَإِنَّ عَلَيْكَ السَّلاَمُ تَحِيَّةُ الْمَوْتَى.
আবূ জুরাই আল-হুজাইমী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সা.এর নিকট এসে বললাম, ‘আলায়কাস সালামু’ ইয়া রাসূলাল্লাহ! রাসূলুল্লাহ সা.বললেন, ‘আলায়কাস সালাম’ বল না। কারণ এটা হলো মৃতের প্রতি সালাম’। [আবু দাউদ : হাদীস নং – ৪৫৩৩]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ سُلَيْمٍ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ عَلَيْكَ السَّلاَمُ. فَقَالَ لاَ تَقُلْ عَلَيْكَ السَّلاَمُ وَلَكِنْ قُلِ السَّلاَمُ عَلَيْكَ.
জাবির ইবনু সুলাইম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সা.এর নিকট এসে বললাম, ‘আলায়কাস সালাম’। তিনি বললেন, ‘আলায়কাস সালাম’ বল না, বরং ‘আসসালামু আলায়কা’ বল। [তিরমিযী : হাদীস নং – ২৬৪৬]
২. কথা বলার পূর্বেই সালাম দেওয়া :
কথা বলার আগেই সালাম দেওয়া মুস্তাহাব। রাসূল সা. বলেন,
إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِاللهِ مَنْ بَدَأَهُمْ بِالسَّلاَمِ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকটে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে প্রথমে সালাম দেয়’।[৪] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! দু’জন লোকের মধ্যে সাক্ষাৎ হ’লে কে প্রথম সালাম দিবে? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার বেশী নিকটবর্তী’।[আবু দাউদ – ৪৫২২]
প্রথমে সালাম না দিলে রাসূল সা. কথা বলার অনুমতি দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
لاَ تَأْذَنُوْا لِمَنْ لَمْ يَبْدَأْ بِالسَّلاَمِ ‘যে ব্যক্তি আগে সালাম দেয় না তোমরা তাকে (কথা বলার) অনুমতি দিও না’।[শুআবুল ঈমান : ৮৫৪৬]
প্রসিদ্ধ হাদীস আগে সালাম পরে কালাম :
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السَّلَامُ قَبْلَ الْكَلَامِ
হজরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত : রাসুল সা. এরশাদ করেন: কথা শুরু করার করার আগেই সালাম দেয়া ;
৩. সালামের পুনরাবৃত্তি :
তিনবার সালাম দেওয়া মুস্তাহাব। রাসূল সা. কোন কোন কথা তিনবার বলতেন। আনাস (রাঃ) বলেন,كَانَ إِذَا تَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أَعَادَهَا ثَلاَثًا حَتَّى تُفْهَمَ عَنْهُ، وَإِذَا أَتَى عَلَى قَوْمٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ سَلَّمَ عَلَيْهِمْ ثَلاَثًا ‘নবী করীম সা.যখন কোন কথা বলতেন তখন তা বুঝে নেয়ার জন্য তিনবার বলতেন। আর যখন তিনি কোন গোত্রের নিকট এসে সালাম দিতেন, তাদের প্রতি তিনবার সালাম দিতেন।[সহীহ বুখারী ৯৩]
প্রয়োজনে তিনবার সালাম দেওয়া যায়। যেমন সালাম দেওয়ার পর কেউ শুনতে না পেলে বা অনুমতির ক্ষেত্রে তিনবার সালাম দেওয়া যায়।
হাদীছে এসেছে,
৪. কে কাকে সালাম দিবে :
চলমান ব্যক্তি উপবিষ্টকে, আরোহী পদব্রজ ব্যক্তিকে, কম সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যককে এবং ছোটরা বড়দেরকে সালাম দিবে। রাসূল সা.বলেন,
يُسَلِّمُ الرَّاكِبُ عَلَى الْمَاشِى، وَالْمَاشِى عَلَى الْقَاعِدِ، وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ،
‘আরোহী পদচারীকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে’। [সহীহ বুখারী -৫৭৬৪}
অন্যত্র তিনি বলেন,يُسَلِّمُ الصَّغِيرُ عَلَى الْكَبِيرِ، وَالْمَارُّ عَلَى الْقَاعِدِ، وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ، ‘ছোটরা বড়দেরকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে’।
[মুসনাদে আহমাদ- ১০২১৬]
৫. সশব্দে সালাম ও উত্তর দেওয়া :
এমন শব্দে সালাম ও সালামের উত্তর দিতে হবে যাতে অন্যরা শুনতে পায়। তবে কোথাও ঘুমন্ত মানুষ থাকলে এমনভাবে সালাম দিবে যাতে জাগ্রত লোকেরা শুনতে পায় এবং ঘুমন্ত লোকের কোন অসুবিধা না হয়। মিক্বদাদ (রাঃ) বলেন,فَكُنَّا نَحْتَلِبُ فَيَشْرَبُ كُلُّ إِنْسَانٍ مِنَّا نَصِيبَهُ وَنَرْفَعُ لِلنَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم نَصِيبَهُ قَالَ فَيَجِىءُ مِنَ اللَّيْلِ فَيُسَلِّمُ تَسْلِيمًا لاَ يُوقِظُ نَائِمًا وَيُسْمِعُ الْيَقْظَانَ، ‘এরপর থেকে আমরা দুধ দোহন করতাম। আমাদের সবাই যার যার অংশ পান করতো। আর আমরা নবী করীম সা.এর জন্য তাঁর অংশ উঠিয়ে রাখতাম। মিক্বদাদ (রাঃ) বলেন, তিনি রাত্রে এসে এমনভাবে সালাম দিতেন যাতে নিদ্রারত লোক উঠে না যায় এবং জাগ্রত লোক শুনতে পায়’।[সহীহ মুসলিম – ৩৮৩১]
৬. সমাবেশে প্রবেশও বের হওয়ার সময় সালাম দেওয়া :
কোন সভায় প্রবেশকালে ও বের হওয়ার সময় উপস্থিত সদস্যদের উদ্দেশ্যে সালাম দেওয়া সুন্নাত। রাসূল সা.বলেন,إِذَا انْتَهَى أَحَدُكُمْ إِلَى مَجْلِسٍ فَلْيُسَلِّمْ فَإِنْ بَدَا لَهُ أَنْ يَّجْلِسَ فَلْيَجْلِسْ ثُمَّ إِذَا قَامَ فَلْيُسَلِّمْ فَلَيْسَتِ الْأُولَى بِأَحَقَّ مِنَ الْآخِرَةِ ‘যখন তোমাদের কেউ মজলিসে পৌঁছবে তখন যেন সে সালাম করে। এরপর যদি তার সেখানে বসতে ইচ্ছা হয় তবে বসবে। অতঃপর যখন উঠে দাঁড়াবে তখনও সে যেন সালাম দেয়। শেষেরটির চাইতে প্রথমটি বেশী উপযুক্ত নয়’।[তিরমিযী- ২৬৩০]
এক সাথে অনেকে বা দলগতভাবে চলার সময় ঐ দলের পক্ষ থেকে একজন সালাম দিলে তা সকলের জন্য যথেষ্ট হবে। রাসূল সা.বলেন,يُجْزِئُ عَنِ الْجَمَاعَةِ إِذَا مَرُّوْا أَنْ يُسَلِّمَ أَحَدُهُمْ وَيُجْزِئُ عَنِ الْجُلُوْسِ أَنْ يَرُدَّ أَحَدُهُمْ، ‘পথ অতিক্রমকালে দলের একজন যদি সালাম দেয় তাহ’লে তা সকলের জন্য যথেষ্ট। এমনিভাবে উপবিষ্টদের একজন তার উত্তর দিলে তা সকলের জন্য যথেষ্ট’।[আবু দাউদ – ৪৫৩৪]
৭. বাড়ীতে বা গৃহে প্রবেশকালে সালাম দেওয়া :
বাড়ীতে বা গৃহে প্রবেশকালে প্রবেশকারী সালাম দিবে, যদিও ঐ ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ঐ ঘরে বসবাস না করে। আল্লাহ বলেন,فَإِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوْتًا فَسَلِّمُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِنْ عِنْدِ اللهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً- ‘অতঃপর যখন তোমরা গৃহে প্রবেশকরবে তখন পরস্পরে সালাম করবে। এটি আল্লাহর নিকট হ’তে প্রাপ্ত বরকমন্ডিত ও পবিত্র অভিবাদন’ (নূর ২৪/৬১)।

অন্যের বাড়ীতে বা ঘরে প্রবেশকালে ও সালাম দিবে। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوْا وَتُسَلِّمُوْا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ-
‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নিবে এবং এর বাসিন্দাদের সালাম দিবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর’ (নূর ২৪/২৭)।

রাসূল সা.বলেন,

ثَلاثَةٌ كُلُّهُمْ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ إِنْ عَاشَ رُزِقَ وَكُفِيَ وَإِنْ مَاتَ أَدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ مَنْ دَخَلَ بَيْتَهُ فَسَلَّمَ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ وَمَنْ خَرَجَ إِلَى الْمَسْجِدِ فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ وَمَنْ خَرَجَ فِيْ سَبِيْل الله فَهُوَ ضَامِنٌ عَلَى اللهِ.

‘তিন ব্যক্তি আল্লাহর যিম্মায় থাকে। যদি তারা বেঁচে থাকে তাহ’লে রিযিকপ্রাপ্ত হয় এবং তা যথেষ্ট হয়। আর যদি মৃত্যুবরণ করে তাহ’লে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশকরাবেন। যে ব্যক্তি বাড়ীতে প্রবেশকরে বাড়ীর লোকজনকে সালাম দেয়, সে আল্লাহর যিম্মায় থাকে। যে ব্যক্তি মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়, সে আল্লাহর যিম্মায় থাকে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়, সে আল্লাহর যিম্মায় থাকে’।[আবু দাউদ -২১৩৩]
এমনকি পরিত্যক্ত ঘরে প্রবেশ করলে বলবে,السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ- ‘আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক’।[মুসনাদে হাকেম -৩৪৪৩]

৮. প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণকারী ব্যক্তিকে সালাম না দেওয়া :
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,أَنَّ رَجُلاً مَرَّ وَرَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَبُولُ فَسَلَّمَ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ. ‘জনৈক ব্যক্তি নবী করীম সা.এর নিকট দিয়ে অতিক্রমকালে তাঁকে সালাম করল, তিনি তখন পেশাব করছিলেন। তিনি তার সালামের জবাব দিলেন না’।
[সহীহ মুসলিম -৫৫৫]

৯. শিশুদের সালাম দেওয়া :
শিশুদের সালাম দেওয়া মুস্তাহাব। আনাস (রাঃ) একবার একদল শিশুর পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে তাদের সালাম করে বললেন যে, নবী করীম (ছাঃ)ও অনুরূপ করতেন।[১৭]

১০. ইহূদী-নাছারাদেরকে আগে সালাম না দেওয়া :
ইহূদী-নাছারা ও বিধর্মীদেরকে আগে সালাম দেওয়া যাবে না। রাসূল সা.বলেন, لاَ تَبْدَءُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى بِالسَّلاَمِ ‘তোমরা ইহুদী-নাছারাদেরকে প্রথমে সালাম করো না’।[সহীহ মুসলিম ৪০৩০] তবে তারা সালাম দিলে উত্তরে শুধু ‘ওয়া আলাইকুম’ বলতে হবে। রাসূল সা.বলেন,إِذَا سَلَّمَ عَلَيْكُمْ أَهْلُ الْكِتَابِ فَقُوْلُوْا وَعَلَيْكُمْ ‘যখন কোন আহলে কিতাব তোমাদের সালাম দেয়, তখন তোমরা বলবে ওয়া আলায়কুম (তোমাদের উপরেও)’।[ সহীহ মুসলিম ৪০৩০]
১১. পরিচিত-অপরিচিত সকল মুসলিমকে সালাম দেওয়া :
মুসলিম মাত্রেই সালাম দেওয়া উচিত। সে আত্মীয় হোক বা অনাত্মীয়, পরিচিত হোক বা অপরিচত। রাসূল সা.বলেন, تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ ‘তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দিবে’।[বুখারী- ১১]

১২. সালাম বহনকারী ও প্রেরণকারীর উত্তর দেওয়া :
কেউ কারো মাধ্যমে সালাম প্রেরণ করলে যে সালাম বহন করে নিয়ে আসবে, তাকে ও সালাম প্রদানকারীকে উত্তর দেওয়া উচিত। হাদীছে এসেছে,
عَنْ غَالِبٍ قَالَ إِنَّا لَجُلُوْسٌ بِبَابِ الْحَسَنِ إِذْ جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ حَدَّثَنِى أَبِى عَنْ جَدِّى قَالَ بَعَثَنِى أَبِى إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ائْتِهِ فَأَقْرِئْهُ السَّلاَمَ. قَالَ فَأَتَيْتُهُ فَقُلْتُ إِنَّ أَبِى يُقْرِئُكَ السَّلاَمَ. فَقَالَ عَلَيْكَ وَعَلَى أَبِيكَ السَّلاَمُ.
মুসনাদে আহমাদ; ( ২২০২৫)
সালামের জবাব দেয়ার নিয়ম :
সালাম দেয়া যেমন গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল, তেমনি এর জবাব দেয়াটাও ওয়াজিব। আল্লাহ আমাদের আদেশ করেছেন সালামের জবাব যেন সালামপ্রদানকারীর চেয়েও সুন্দরভাবে অথবা সমান পরিমাণে দেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
وَإِذَا حُيِّيْتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّواْ بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا
‘যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয়, তোমরাও অভিবাদন জানাও তারচেয়ে উত্তমভাবে অথবা তারই মতো করে ফিরিয়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।’ (সূরা: নিসা, আয়াত: ৮৬)
অধিকাংশ আলেমের মতে, ‘আসসালামু আলাইকুম’ এর জবাবে বলা উচিত ‘ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।’ ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’র জবাবে বলতে হবে ‘ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।’ ‘আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’র জবাবে এর চেয়ে উচ্চস্বরে ও আনন্দিত স্বরে বলতে হবে ‘ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।’ তবে এর চেয়ে বাড়িয়ে জবাব দিতে হাদিসে অনুৎসাহিত করা হয়েছে।
নিম্নের হাদিস থেকে বোঝা যায় সালামের জবাবের দ্বারা সাওয়াব বৃদ্ধি পায়-
عَنْ أَبِي رَجَاءٍ عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ أَنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرٌ ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِشْرُونَ ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثُونَ
ইমরান বিন হুসাইন বর্ণনা করেন, ‘এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে এসে বললো আসসালামু ‘আলাইকুম। তিনি (সা.) বললেন, ‘দশ।’ আরেক ব্যক্তি এসে বললো আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তিনি (সা.) বললেন, ‘বিশ।’ আরেক ব্যক্তি এসে বললো আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। তিনি বললেন, ‘ত্রিশ।’ (জামে তিরমিযী- ২৬১৩)
যে সব ক্ষেত্রে এবং যাদের সালাম দেয়াা মাকরূহ।
নিম্নে তাদের আলোচনা করা হল: এরা ছাড়া বাকী যাদের সাথে তোমার দেখা হবে, তাদের সালাম দেয়াা সুন্নত ও বৈধ।
১. সালাতরত ব্যক্তি,২. তিলাওয়াাতকারী,৩. যিকিরকারী,৪. হাদিস পাঠদানকারী,৫. খুতবাদানকারী এবং যারা খুতবা শ্রবনে মগ্ন, ৬. ফিকহ নিয়ে আলোচনাকারী,৭. বিচারক যিনি বিচার কার্যে ব্যস্ত
৮. মুয়াাজ্জিনকে যখন সে আজান দিতে থাকে,৯. ইকামত দানকারি,১০. অপরিচিত যুবতী নারী, [যাদের সালাম দেয়াাতে ফিতনার আশংকা থাকে] ১১. যারা দাবা খেলায়া মগ্ন তাদের ও তাদের মত লোকদের সালাম দেয়াা মাকরূহ। ১২. যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশায়া মগ্ন,
১৩. কাফের ও লেংটা লোককে সালাম দেবে না,
১৪. পেশাব পায়াখানায়া লিপ্তদের,
১৫. খাওয়াায়া ব্যস্ত তবে যদি তুমি ক্ষুধার্ত হও এবং জান যে লোকটি তোমাকে ফিরিয়ে দেবেনা।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে এমহান মর্যাদাবান সুন্নাতের আমল করার তাওফীক নসীব করুন । আমীন ।

error

Share this news to your community