শুটকি মাছে ভাগ্য বদল, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

বগুড়া নিউজ লাইভ ডটকম নাটোর: বৃহত্তর চলনবিলে শুটকি মাছ তৈরি করে ভাগ্য বদল হচ্ছে এই এলাকার মানুষের।দেশের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে ওই সব এলাকার নিন্ম আয়ের মানুষগুলো। সেই সাথে জাতীয় আয়েও অবদান রাখছেন তারা। নাটোরের নলডাঙ্গা, গুরুদাসপুরের বিলশা, সাবগাড়ী, পিপলা, খুবজীপুরে, সিংড়া কৃষষ্ণপুর, নুরপুর, বামিহাল, পাবনার চাটমোহর এবং সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উজেলার মহিষলুটি মাছের আড়তে শুটকি মাছ শুকানোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন ওই সব এলাকার হাজারো নারী-পুরুষ। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে- চলনবিলাঞ্চলের পাঁচটি জেলার ১২টি উপজেলায় হাজারো শ্রমিক তাদের ব্যসÍ সময় পার করছেন।
নারী-পুরুষের হাতের তৈরি চলনবিলের শুঁটকি এখন দেশ ছেড়ে বিদেশেও যাচ্ছে। শুটকি তৈরিতে নারীদের অবদানের কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে পরিকল্পিতভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এই শুটকি প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। তাই সময় থাকতে জরুরীভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলের সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুড়া ও রাজশাহী অঞ্চলে দেশীয় পদ্ধতিতে শুটকি তৈরি করা হচ্ছে। ভোরের আলো শুরু হতে না হতেই শুরু হয় তাদের কর্মযজ্ঞ। মাছে লবণ মাখানো, মাপজোখ করা, বহন করে মাচায় নেওয়া, বাছাই করা শুকানো আরও কত কাজ। আর এসব কাজের বেশীর ভাগই হয় নারীদের হাতে। মহাজন কেবল মাছ কিনেই দায়মুক্ত। চলনবিলের মিঠা পানির মাছের শুটকির জন্য বেশ সুনাম রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে রাস্তার পাশেই তৈরি হয় বিশাল এলাকাজুড়ে বসে শুটকি মাছ তৈরির কারখানা। চলনবিলের অধিকাংশ মাছ চলে আসে জেলা-উপজেলা সদরের আড়ত ও বাজারে। সেখান থেকে পাইকাররা শুটকির জন্য কিনে নিয়ে আসেন প্রচুর মাছ। তবে ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাসেই মাছের বিশাল মৌসুম। ওই সময়ই বেশী চলে শুটকির মাছ সংগ্রহ। এসময় বর্ষার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় শুরু হয় এই কর্মজজ্ঞ।
সিংড়া শুঁটকি ব্যবসায়ী আবু বক্কর জানান, চলনবিলের শুঁটকি মাছের স্বাদ ও মান ভালো হওয়ায় দেশ-বিদেশে এর চাহিদা বেশি। আশ্বিন মাস থেকে শুটকির চাতালে মাছ শুকানো শুরু হয়েছে। অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে শুকানোর কাজ। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শুঁটকি ব্যবসায়ীরা মাছ শুকানোর চাতাল তৈরি করেছেন। ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করা যায়।
গুরুদাসপুরের শুঁটকি ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, পানি কমতে থাকলে বিলের বিভিন্ন স্থানে সোঁতিজাল পাতা হয়। জালে ধরা পড়ে পুঁটি, খলসে, চেলা, টেংরা, বাতাশি, চিংড়ি, নলা, টাঁকি, গুচি, বাইম, বোয়ালসহ নানা জাতের মাছ। এসব মাছ চাতালে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। ২৫০ টাকা থেকে ৮ শত টাকা দরে প্রতি কেজি শুঁটকি মাছ বিক্রি করা হয়।
শুঁটকি তৈরির কাজে নিয়োজিত শ্রমিক আক্কাস আলী, রজুফা বেওয়া ও রিনা খাতুন জানান, ৩ কেজি তাজা মাছ শুকিয়ে ১ কেজি শুঁটকি মাছ তৈরি হয়। এই ব্যবসা আর্থিকভাবে সচ্ছলতার পাশাপাশি এ ব্যবসায় ঝুঁকিও অনেক বেশি। ঠিকমতো পরিচর্যা করতে না পারলে শুঁটকি মাছে পোকা লেগে নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া আবহাওয়া খারাপ হলে, রোদ না থাকলে বিপদে পড়তে হয়।
শুটকিপল্লীর মালিক রবিন আলী , কিতাব উদ্দিন, জমির আলী জানান, সরকারি জায়গা লিজ নিয়ে চালানো এ পল্লীতে এখন কাজ করছেন হাজারো শ্রমিক।শুধু রোদে দেওয়া নয়, সারাদিন তাদের কাজ কয়েকবার উল্টে-পাল্টে দেওয়া। রোদ কম থাকলে শুকাতে লাগে তিন-চার দিন। আবার রোদ বেশি থাকলে একদিনেই শুটকি হয়ে যায়। তবে বড় কিছু মাছে আবার একটু সময় লাগে। এই ছয়মাস তাদের মাছ কেনাও লাগে না। মহাজন নিয়মিত খেতে দেন। তাতে কম মজুরিতে কাজ করেও খুশি হন তারা। গ্রামের সহজ সরল এসব শ্রমিক অল্পতেই তুষ্ট। তাই সারাদিন বিরামহীন খেটেও মুখে কষ্টের ছাপ নেই। এই শ্রমিকদের এই দৃঢ় কর্মদক্ষতায় ভালো মহাজনরা সবসময় ভালোই থাকেন।
নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান- সব কিছু মিলিয়ে বৃত্তম চলনবিল অঞ্চলের শস্য ও মৎস্য ভান্ডার নামে খ্যাত এই অঞ্চলের ফসলাদি ও মৎস্য সুস্থভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক ব্যাপক উন্নতি লাভ করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

error

Share this news to your community