বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের মৃত্যুদণ্ডের পরোয়ানা জারি

বগুড়া নিউজল্ইাভ ডটকম, ঢাকা:বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের সাজার পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
বুধবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে এ পরোয়ানা ইস্যু করেন।
এদিন সকালেই রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল প্রথমে মাজেদ কে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেন। তবে আদালত বন্ধ থাকায় ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ কোনো পদক্ষেপ না নিতে পারার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের নজরে আনেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এরপর ওই বিচারকের ছুটি শুধু ৮ এপ্রিলের জন্য বাতিল করেন।
এরপর আদালত মাজেদের বিরুদ্ধে প্রডাকশন ওয়ারেন্ট (হাজিরা পরোয়ানা)ইস্যু করলে তাকে কেরানীঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুরান ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। এসময় আদালত প্রথমে তাকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষ তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যুর আবেদন করে। এসময় বিচারক সাজা পরোয়ানা পড়ে শোনালে মাজেদ নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

পরে তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পরোয়ানা জারির আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী।
এর আগে মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে নেওয়া হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির সেলে রাখা হয়।
সোমবার (৬ এপ্রিল) দিনগত রাত ৩টার দিকে মিরপুর থেকে মাজেদকে গ্রেফতার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আব্দুল মাজেদসহ ১২ আসামিকে ২০০৯ সালে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি কার্যকর হয়।
রায় কার্যকরের আগে ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা। আব্দুল মাজেদ গ্রেফতার হওয়ার পর বর্তমানে পলাতক রয়েছেন পাঁচজন। পলাতক আসামিরারা হলেন- খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, এ এম রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেম উদ্দিন। তারা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা। তারা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছেন।
ফিরে দেখা: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে পদে পদে বাধা আসে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরপরই দায়মুক্তি (ইনডেমনিটি) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর দায়মুক্তি আইন বাতিল করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় দেন। নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। এরপর ১২ আসামির মধ্যে প্রথমে চারজন ও পরে এক আসামি আপিল করেন। কিন্তু এরপর ছয় বছর আপিল শুনানি না হওয়ায় আটকে যায় বিচারপ্রক্রিয়া।
দীর্ঘ ছয় বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আপিল বিভাগে একজন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাটি আবার গতি পায়। ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির লিভ টু আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। আপিলের অনুমতির প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালের অক্টোবরে শুনানি শুরু হয়। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পাঁচ আসামির আপিল খারিজ করেন। ফলে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে হাইকোর্টের দেওয়া ১২ খুনির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। এর মধ্য দিয়ে ১৩ বছর ধরে চলা এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়।
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ওই রায় কার্যকরের আগেই ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা।

error

Share this news to your community