বগুড়ার দুপচাঁচিয়া জেকে কলেজের লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে নিয়েছে এক আওয়ামীলীগ নেতা

বগুড়া নিউজলাইভ ডটকমঃ জাহাননারা-কামরুজ্জামান (জেকে) ডিগ্রী কলেজের রাস্তার প্রাতিষ্ঠানিক বনায়ন কর্মসূচির লক্ষাধিক টাকার ৪টি মেহেগনি গাছ কেটে নিয়েছে এক আওয়ামীলীগ নেতা। লকডাউনে যখন মানুষ ঘরবন্দী ঠিক সেই মূহুর্তে গাছগুলো কেটে নিয়ে যায় ওই আওয়ামীলীগ নেতা। শনিবার ও রবিবার ওই গাছগুলো কাটা হয়। রবিবার সকালে গাছগুলো কাটতে দেখে স্থানীয় লোকজন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে খবর দিলে অধ্যক্ষ দুপচাঁচিয়া থানা পুলিশ খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে গাছ কাটার শ্রমিকরা পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে কলেলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দুপচাঁচিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ এখনও কোন পদক্ষেপ নেননি। তবে ওই নেতা দাবী করেছেন গাছ গুলো আওয়ামীলীগ নেতা তপন কুমার কুন্ডু’র জায়গায় ছিল, তাই তিনি আমাকে বলেছিল গাছ বিক্রি করতে আমি বিক্রি করে দিয়েছি। যারা কিনে নিয়েছে তারা গাছগুলো কেটে নিয়ে গেছে। তবে তপন কুন্ডু দাবী করেছেন, গাছ কাটা এবং বিক্রি করার বিষয়ে সে কিছু জানে না। সে গাছ বিক্রিও করেনি এবং গাছ কাটেওনি। সে দাবী করেছে গাছগুলো আমার জায়গার মধ্যে ছিল।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম জহির জানান, কলেজে যাতায়াতের প্রধান সড়কের দু’ধারে প্রায় ৪ শ মেহেগনি গাছ বনবিভাগের মাধ্যমে লাগানো হয়েছিল ১৯৯০ সালের দিকে। সেই সময় কলেজের অধ্যক্ষ ছিল মাহবুবার রহমান মুকুল। সেই থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ গাছগুলো পরিচর্চা করে আসছে। হঠাৎ দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি তপন কুমার কুন্ডু কলেজ রোড়ের পশ্চিম পাশের্^র ৩০, ৪০টা গাছ তার দাবি করে গাছগুলো কাটার চেস্টা করে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বাঁধা দেয়। কিন্তু এতে সে খান্ত হয়নি। পরে কৌশল অবলম্বন করে আবার উপজেলা চেয়ারম্যানের ফজলুল হকের মাধ্যমে গাছগুলো বিক্রি করে দেয়। স্থানীয় কাট ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিক গাছগুলো কিনে নেন। আবু বক্কর সিদ্দিকই গাছগুলো কেটে নিয়ে গেছে।
এব্যাপারে আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, আমি গাছগুলো দুপচাঁচিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হকের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে গাছগুলো কিনে নিয়েছি। তাই গাছগুলো আমি কেটে নিয়েছি।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক জানান, ওই জায়গার মালিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি তপন কুমার কুন্ডু উপজেলায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা সার্ভেয়ার ও পৌর সার্ভেয়ার দিয়ে কলেজ রোড়ের জায়গা মাপা হয়। সার্ভেয়ারের রির্পোটের ভিত্তিতে গাছগুলো তপন কুমার কুন্ডুকে বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়। তপন কুমার কুন্ডু গাছগুলো বিক্রি করেছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবগত আছেন। কিন্তু তপন কুমার কুন্ডু জানিয়েছেন, গাছগুলো কাটা এবং বিক্রির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
এ ব্যাপারে উপজেলা ফরেষ্ট অফিসার আখতারুজ্জামান রাঙ্গা জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে প্রাতিষ্ঠানিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় নেচার নামে একটি সংস্থার সহযোগিতায় উপজেলা বন বিভাগ গাছগুলো কলেজ রোড়ে লাগিয়ে ছিল। এই গাছ কেউ কাটতে পারবে না। প্রতিষ্ঠান কাটতে গেলেও উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির অনুমতি লাগবে। তিনি আরো বলেন, মানুষের চলাচলের জন্য কোন সড়ক নির্মিত হলে ওটা আর কোন ব্যক্তি মালিকানায় থাকে না। ৩০ বছর ধরে কোন মালিক বের হয়নি আজ হঠাৎ করে কেন ওই গাছে দিকে নজর পড়লো? তিনি বলেন কেটে নেয়া গাছগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছি।
দুপচাঁচিয়ার ওসি মিজানুর রহমান জানান, এ ব্যাপারে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম জহির একটি অভিযোগ দিয়েছেন। গাছের মালিকানা দুই পক্ষই দাবি করেছেন। তাই এখন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

error

Share this news to your community