করোনা: দেশে শনাক্ত রোগী লাখ ছাড়াল, মৃত্যু ১৩৪৩

বগুড়া নিউজলাইভ ডটকম ডেস্ক: বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর ১০৩তম দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার খবর দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।আর এর মধ্য দিয়ে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের টালিতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বিশ্বে ১৭ নম্বরে থাকা কানাডাকেও ছাড়িয়ে গেল বাংলাদেশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৮০৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ২ হাজার ২৯২ জন হল।আক্রান্তদের মধ্যে আরও ৩৮ জন মারা গেছেন গত এক দিনে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩৪৩ জন।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বৃহস্পতিবার দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সবশেষ তথ্য তুলে ধরেন।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে সেরা ওঠা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ নিজেও এদিন বুলেটিনে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের এ সঙ্কট দুই থেকে তিন বছরও চলতে পারে।

আইডিসিআরের অনুমিত হিসাব দিয়ে নাসিমা সুলতানা বলেন বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ হাজার ৯৭৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়। তাতে সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল মোট ৪০ হাজার ১৬৪ জনে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ৮ মার্চ, তার দশ দিনের মাথায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে।প্রথম রোগী শনাক্তের ২৮দিন পর ৬ এপ্রিল শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়ায়। ১৪ এপ্রিল এক হাজার ছাড়ায় শনাক্ত রোগী। এরপর ৪ মে ১০ হাজার, ১৫ মে ২০ হাজার এবং ২ জুন পঞ্চাশ হাজার ছাড়িয়েছিল শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। পরের ১৬ দিনেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়াল।

বাংলাদেশে ১৮ মার্চ প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২০ এপ্রিল মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়ায়। ১০ জুন মৃতের সংখ্যা হাজারের ঘর পেরিয়ে যায়।জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের টালি অনুযায়ী, সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত ৮৩ লাখ ৬২ হাজার কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৩ জন।নাসিমা সুলতানা বলেন, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৩১ জন পুরুষ এবং ৭ জন নারী।

তাদের মধ্যে ১৮ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ১৪ জন ঢাকা বিভাগের, দুজন খুলনা বিভাগের এবং ১ জন বরিশাল বিভাগের, ১ জন ময়মনসিংহ বিভাগের এবং ১ জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

মৃত ৩৮ জনের মধ্যে ৫ জনের বয়স ছিল ৮০ বছরের বেশি। এছাড়া ২ জনের বয়স ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে, ১৪ জনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, ৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৫ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ২ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং একজনের বয়স ১০ বছরের নিচে ছিল।বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৫৯টি ল্যাবে ১৬ হাজার ২৫৯টি পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৫০৩টি নমুনা।নমুনা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। সনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩১ শতাংশ।

এদিকে,আগামী ২ থেকে ৩ বছরে দেশের মানুষের করোনা থেকে মুক্তি নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ আজ সংবাদ বুলেটিনে করোনা সম্পর্কে এই ভবিষ্যৎ বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তথ্য অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে করোনা বিষয়ে এই মত দিয়েছেন।মানুষ যখন আগামী দুই–এক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে তখনই এক গভীর অন্ধকারের ছবি আবুল কালাম আজাদ তুলে ধরলেন দেশবাসীর সামনে।

তাঁর এই কথার অর্থ কী? আগামী ২–৩ বছর মানুষ ঘর বন্ধী থাকবে? আগামী ২–৩ বছরের স্কুল কলেজ বন্ধ থাকবে? আগামী ২–৩ বছর মানুষ করোনায় সংক্রমিত হতেই থাকবে? এরকম আরও অসংখ্য প্রশ্ন আছে মানুষের মনে। বিশ্বের অনেক দেশ যখন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এনে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছে তখন বাংলাদেশ বলছে অন্য কথা।প্রশ্ন হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেন এই কথা বললেন। জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেন, কিসের ওপর ভিত্তি করে এমন মন্তব্য বুঝতে পারছি না। আপনি যদি সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেন তা হলে করোনা আজীবন থাকবে। এরকম কথার অর্থ হচ্ছে হাল ছেড়ে দেওয়া।’

সংবাদ বুলেটিনের পর প্রথম আলো পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির কাছে এ বিষয়ে জানতে চায়। এই কমিটিতে আছেন ৮ জন সদস্য। এই কমিটি তিন মাস ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নানা পরামর্শ দিচ্ছে। এই কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, ২৩ বছর করোনা থাকবে এমন কোনো কথা তারা সরকার বা অধিদপ্তরকে বলেনি।জাতীয় কারিগরি পরার্শক কমিটি নামে ১৭ সদস্যের আর একটি কমিটি আছে যারা সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে। এই কমিটির সদস্যরাও বলেছেন, তারাও এরকম কথা কখনও বলেননি।

তা হলে আবুল কালাম আজাদ এ কথা কেন বললেন? সংবাদ বুলেটিনের পর প্রথম আলো আবুল কালাম আজাদের কাছে তাঁর বক্তব্যের ভিত্তি কী তা জানতে চায়। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন এই ভাইরাস সহজে যাচ্ছে না। উচ্চহারে সংক্রমণ হয়তো হবে না। ২৩ বছর থাকবে। দেশবাসীর আগেভাগে এ বিষয়ে প্রস্তুত থাকা দরকার।

error

Share this news to your community