কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে পর্যটককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

কক্সবাজার প্রতিনিধি, বগুড়া নিউজলাইভ ডটকমঃ স্বামী-সন্তানকে নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ঢাকার এক গৃহবধূ (২৫)। সংঘবদ্ধ একটি চক্র শহরের লাবণী পয়েন্ট থেকে ওই নারীকে তুলে নিয়ে তার স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে ও হত্যার হুমকি দিয়ে দুই দফা গণধর্ষণ করে। খবর পেয়ে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) রাত দেড়টার দিকে জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেল থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

র‌্যাব-১৫-এর কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দু’জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় রিয়াজ উদ্দিন ছোটন নামে হোটেল ম্যানেজারকে আটক করা হয়েছে। তিনি ঘটনার পর পলাতক ছিলেন।

ভুক্তভোগী ওই নারী সাংবাদিকদের বলেন, স্বামী ও আট মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে বুধবার তিনি কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছিলেন। সকালে কক্সবাজারে পৌঁছে হলিডে মোড়ে একটি হোটেলে ওঠেন তারা। সেখান থেকে বিকেলে যান সৈকতের লাবণী পয়েন্টে। অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে, কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার সন্তান ও স্বামীকে সিএনজি করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি সিএনজিতে তাকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুঁপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে ওই তিনজন। পরে তাকে নেয়া হয় শহরের লাইট হাউজ এলাকার জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করেন ওই তিন যুবক। এ ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে রুম বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা।

ওই নারী আরও জানান, জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খুলেন তিনি। তারপর ফোন দেন ৯৯৯-এ। পুলিশ তাকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় ফোন করে র‌্যাবে অভিযাগ জানান। র‌্যাব ওই হোটেলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। আর তার স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করা হয় পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে।

জিয়া গেস্ট ইনের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, তিন যুবক অটোরিকশায় এক নারীকে নিয়ে আসেন। দু’জন ওই নারীর সঙ্গে থাকেন। আরেকজন হোটেলের রুম বুকিং দেন। সে সময় রিসিপশনে হোটেলের ব্যবস্থাপক ছোটন ছিলেন। এরপর তিন যুবক ওই নারীকে নিয়ে ওপরে চলে যান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে যুবকরা বেরিয়ে গেলেও ওই নারীকে নামতে দেখা যায়নি। র‌্যাব জানায়, এই ফুটেজ থেকে দু’জনকে শনাক্তের পর ওই নারীকে তাদের ছবি দেখানো হয়। তিনি তাদের চিনতে পেরেছেন।

ভুক্তভোগীর স্বামী বলেন, সামান্য ধাক্কাধাক্কির কারণে তারা আমার এতো বড় ক্ষতি করল। বার বার হাতে-পায়ে ধরলেও তারা আমার স্ত্রীকে ফেরত দেয়নি। বেড়াতে এসেছিলাম খুশিতে। এখন স্ত্রীর অবস্থা ভালো নয়। তাকে নিয়ে চরম চিন্তায় আছি।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার বলেন, বিষয়টি নিয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে। মামলার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।
পর্যটক নারীকে অস্ত্রের মুখে বাইকযোগে নিয়ে যায় আশিক
পর্যটক নারীকে অস্ত্রের মুখে বাইকযোগে নিয়ে যায় আশিক নামের এক যুবক। প্রত্যক্ষদর্শী আমির হাফেজ জানান, বুধবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে পর্যটন গলফ মাঠের সানিবীচ স্কুলের সামনে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। এতে হৈচৈ শুরু হলে পুলিশের সামনে থেকে ওই নারীকে নিয়ে বাইকযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে আশিক।
আরও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কবিতা চত্বর সড়কের পুলিশ বক্সের সামনে থেকে ওই পর্যটক নারীকে জিম্মি করে বাইকযোগে আশিকসহ আরও কয়েকজন যুবক নিয়ে যায়। হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দু’জনকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাবের ভাষ্য মতে, ওই দুই যুবক হলেন কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম ও আবদুল জব্বার জয়া। আরেকজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। র‌্যাব জানিয়েছে, আশিক চার মাস আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি ছিনতাই, মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি।

৯৯৯-এ কল করেও সহায়তা পাননি

ভুক্তভোগী গৃহবধূ অভিযোগ করেন, ঘটনার পর জাতীয় জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯-এ কল করেন তিনি। পুলিশ তাকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়। পরে র‌্যাব এসে তাকে উদ্ধার করে।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, ৯৯৯-এ ফোন করার পর আমাকে ফোন দেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তা। তার নাম-পরিচয় না বললেও পুরো বিষয়টি আমি তাকে বলি। কিন্তু তিনি আমার কাছে না এসে উল্টো থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেন। একপর্যায়ে আমি হোটেলে-মোটেল জোনে বসানো সাইনবোর্ড থেকে র‌্যাবের নম্বর পাই। যোগাযোগ করা হলে তারা দ্রুত এগিয়ে আসে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে জরুরি সেবার জন্য ফোন দিলে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়ার কথা ছিল। সেটা আমি পাইনি।

এ অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীরুল গিয়াস বলেন, এই তথ্যটি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিচ্ছি। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, ৯৯৯-এ সার্বক্ষণিক মোবাইল টিম মাঠে থাকে। এমন তো হওয়ার কথা নয়। যদি কেউ দায়িত্বে অবহেলা করে। তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর আশিকের নেতৃত্বে কয়েকজন এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। এই মামলায় তিনি জেলে ছিলেন। চার মাস আগে জেল থেকে বের হওয়ার পর তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেখা যায়। আশিক এলাকায় মাদক কারবার ও যৌনকর্মী সরবরাহের কাজ করেন। জয়া তার অন্যতম সহযোগী। তিনি আরও জানান, ভুক্তভোগী নারীকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ ভ্রমণ করে। তবে, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সহজে যাতায়াতের ব্যবস্থাসহ অন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা বাঞ্চনীয়, তার অভাব রয়েছে। অনেক সময় পর্যটকরা ঘুরে-বেড়াতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। গত কয়েক মাসে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেখানের পর্যটনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। গত তিন মাসে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ৫ জনকে হত্যা করেছে। এর সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের সহিংসতা যুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।

error

Share this news to your community