ঈদের দিনের ফজিলাত ও কয়েকটি আমল

মুফতি আমিনুল হক আজাদী, বগুড়া নিউজলাইভ ডটকমঃ ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি,বাস্তবেও তো তাই কারন ঈদের দিনে আল্লাহর পক্ষ থেকে মাগফিরাতের ঘোষনা দেয়া হয়, আসমানে এদিনের নাম (ইয়াওমুল জায়েজা) পুরস্কার দিবস। হাদীস শরীফে এসেছে , সাঈদ বিন আওস আল আনসারী তার পিতা রা. থেকে বর্ননা করেন যে, মহানবী সা. এরশাদ করেন; যখন ঈদের দিন সকাল হয় সন্মানিত ফেরেস্তাগন রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাড়িয়ে যান এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষনা করেন : হে মুসলিম উম্মাহ আজকের সকালে রব্বে কারীমের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য মঙ্গলের সুসংবাদ গ্রহন করো, আজ তিনি তোমাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করবেন, কারন তোমাদের কে রাত্রী জাগরনের জন্য বলা হয়েছে তোমরা করেছো, দিনে রোজা রাখার জন্য আদেশ করা হয়েছে তোমরা আদেশ পালন করেছো, তোমরা তোমাদের প্রভুর প্রত্যেক হুকুম মান্য করেছো আজ তোমাদের পুরস্কার নিয়ে নাও, যখন তারা ঈদের নামাজ আদায় করে তখন এলান করা হয় যে, তোমাদের প্রভু তোমাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন তোমরা খুশি মনে ঘরে ফিরে যাও, আসমানে এদিনের নাম (ইয়াওমুল জায়েজা) পুরস্কার দিবস। (তাবারানী হাদীস নং ৬১৬)
আরও একটি বর্ননা, যখন ঈদের রাত হয় তখন ফেরেস্তাগন আনন্দে মেতে উঠে, মহান আল্লাহ তাআলাও নুরের তাজাল্লি বৃদ্ধি করে দেন এতে বার্ননাতীত সুর্ন্দয্য পরিলক্ষিত হয় এবং তিনি
ফেরেস্তাদের কে বলেন; হে ফেরেস্তারা তোমরা বলো দেখি ,যদি কোনো কর্মচারী তার কর্ম পূর্ণ করে তার প্রতিদান কি হওয়া উচিৎ? ফেরেস্তারা বলে তার প্রতিদান পূর্ণ করে দেয়া উচিৎ , মহান দয়ালু আল্লাহ তায়ালা বলেন তোমরা সাক্ষি থাকো আমি প্রতিদান স্বরূপ আমার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম ,
অন্য বর্ননায় আছে তোমরা সাক্ষি থাকো আমি আমার বান্দাদের রোজা ও তারাবীহকে আমার রাজী হওয়ার ও আমার পক্ষ থেকে মাগফিরাতের কারন হিসেবে গ্রহন করলাম এবং একথার ঘোষনা করেন যে, হে আমার বান্দারা তোমাদের দনিয়া আখেরাতের যা ইচ্ছা আমার কাছে চাও আমার ইজ্জতের কসম আমি তা পূরণ করবো, আমার ইজ্জতের কসম যতদিন তোমরা আমার সাথে এমন সম্পর্ক জুরে থাকবে আমি তোমাদেরে দোষ গোপন করতে থাকবো, আমার ইজ্জতের কসম আমি তোমাদের শাস্তিপ্রাপ্তদের সামনে লজ্জিত করবোনা, যাও যাও আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম” আমি তোমাদের উপর রাজী হয়ে গেলাম, হে প্রেমাস্পদরা তোমরা কি আমার উপর রাজী ? ”সুবহানাল্লাহ” এতে ফেরেস্তারাও খুশি হয় । (শুআবুল ইমান লিল বায়হাকী হাদীস নং ৩৫৪০)
প্রিয় পাঠক ভাই ও বোনেরা! এমন ফজিলাতের মুহুর্ত হেলায় নষ্ট হয়ে না যায় সেজন্য আসুন জেনে নেই এই পবিত্র দিনে আরও কি কি আমল আছে যার দ্বারা মহান আল্লাহ ও তার রাসুল খুশি হয়ে আমাদের ক্ষমা করে দিবেন ।
নিচে ঈদের দিনের কয়েকটি আমল উল্লেখ করছি
১. মনে রাখতে হবে রমজানে যে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার যে অভ্যস গড়ে উঠেছে তা প্রথম দিনেই বন্ধ না হয়ে যায় এজন্য সুবহে সাদিকের আগেই ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া ও দু চার রাকাত নামাজ আদায় । (বায়হাকী, হাদীস নং-৬১২৬)
২।.মিসওয়াক করা। কারন মিসওয়াক করা আল্লাহ তাআলার রেজামন্দির কারন (বুখারী হাদীস নং-২৩৮৬)
৩. অন্য দিনের তুলনায় ভালো করে গোসল করা। (ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩১৫)
৪.ইসলামী শরীয়াসম্মত সাজসজ্জা করা।যেমন সুন্নাতি জামা পরিধান করা পাগড়ী রুমাল ইত্যাদী ব্যবহারের চেষ্টা করা (বুখারী, হাদীস নং-৯৪৮)
৫. সামর্থ অনুপাতে উত্তম পোশাক পরিধান করা। মনে রাখতে হবে উত্তম হওয়ার জন্য নতুন হওয়া জরুরী নয় বিশেষত করোনা মহামারীর বছর (বুখারী, হাদীস নং-৯৪৮, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং -৭৫৬০)
৬. আতর জাতিয় খশবু ব্যবহার করা। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৭৫৬০)
৭. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার আগে মিষ্টি জাতীয় যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। মহানবী সা. বেজোর সংখ্যক খেজুর খেতেন। তবে ঈদুল আযহাতে কিছু না খেয়ে ঈদের নামাযের পর নিজের কুরবানীর গোশত আহার করা উত্তম। (বুখারী, হাদীস নং-৯৫৩, তিরমিজী, হাদীস নং-৫৪২, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৬০৩)
৮. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। (আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৭)
৯. ঈদুল ফিতরে ঈদগাতে যাওয়ার পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা। (দারাকুতনী, হাদীস নং-১৬৯৪)
১০. ঈদের নামায খোলা ময়দানে আদায় করা, বিনা কারনে মসজিদে আদায় না করা। (বুখারী, হাদীস নং-৯৫৬, আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৮)
১১. এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাবে ফেরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরবে । (বুখারী, হাদীস নং-৯৮৬)
১২. যান বাহন ব্যবহার না করে পায়ে হেটে যাওয়া। (আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৪৩)
১৩. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার সময় নিচু স্বরে এই তাকবীর পড়তে থাকাঃاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
তবে ঈদুল আযহায় যাবার সময় পথে এ তাকবীর উচ্চ আওয়াজে করে পড়তে থাকবে। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-১১০৫)
১৪. একে অপরের কুশল বিনিময় করার জন্য ঈদগাহ থেকে ধীর গতিতে বের হওয়া ।
পরিশেষে বলবো আমাদের জীবনে এই ঈদটা একটু ব্যতিক্রম । কারন দেশের জনগন এখন করোনা মহামারির ভয়ে সন্ত্রস্ত তাই ধর্মমন্ত্রনালয় কর্তৃক ষোষিত শর্তাবলির দিকে লক্ষ্য রেখে বিশেষ সতর্ক থাকার অনুরোধ রইলো। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সুস্থ্যতার সাথে পবিত্র ঈদুল ফিতর আদায় করার তাওফীক নসীব করুন । আমীন
লেখক :- মুফতি আমিনুল হক আজাদী ,
পরিচালক তাহযীবুল বানাত মহিলা মাদরাসা ,এস,পি,ব্রিজ,বৌ বাজার, নাটাইপাড়া বগুড়া।

error

Share this news to your community